2

ইত্তেফাক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন কর্তৃক মোসাফির ছদ্মনামে লিখিত রাজনৈতিক মঞ্চ শীর্ষক একটি উপ-সম্পাদকীয়

শিরোনাম সূত্র তারিখ
 ইত্তেফাক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন কর্তৃক মোসাফির ছদ্মনামে লিখিত রাজনৈতিক মঞ্চ শীর্ষক একটি উপ-সম্পাদকীয় দৈনিক ইত্তেফাক ৪ অক্টোবর , ১৯৬৪

 

 

রাজনৈতিক মঞ্চ

মোসাফির

মোহতারেমা মিস ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনী অভিযান শুরু হইতে না হইতেই ক্ষমতাসীন মহল এমনকি প্রেসিডেন্ট আইয়ুব পর্যন্ত বেসামাল হইয়া পরিয়াছেন । ইতিপূর্বে কনভেনশন লীগের সেক্রেটারী জেনারেল কাম কেন্দ্রীয় প্রচার সচিব মিঃ ওয়াহিদ খান নির্বাচনী প্রচারকালে কাহারো প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমন না চালাইবার যে আবেদন জানাইয়াছিলেন , তাহা তাদের দলই ভং করিলেন । মেসার্স ওয়াহিদুজ্জামান , হাসিমুদ্দিন প্রমুখ ইতিমধ্যেই মিস জিন্নাহর বিরুদ্ধে আবোল আবোল করিয়াছেন । অবশেশে গত পরশু লাহোরে সাংবাদিক সম্মেলনে স্বয়ং আইয়ূব সাহেব মিস ফাতেমা জিন্নাহ এবং প্রতিটি বিরোধি দলের দেশপ্রেমের প্রতি কটাক্ষ করিয়া বক্তৃতা করিয়াছেন । ফিল্ড মার্শাল আইয়ূবের পক্ষে রাজনীতিকদের গালিগালাজ করা , তাদের দেশপ্রেমের উপর কটাক্ষ করা নতুন কিচ্ছু নয় । সামরিক শাসন প্রবর্তনের পর উঠিতে বসিতে রাজনীতিকদের আদ্যশ্রাদ্ধ করাই ছিল শাসকমণ্ডলীর প্রধান কাজ । ইহাতে সন্তুষত হইতে না পারিয়া তাহাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি , স্বজনপ্রীতির হয়রানিমুলক মামলা মোকসদ্দমা রুজু করা হয় ; শত শত রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীকে বিনা বিচারে জেলে আটক রাখা হয় ; খামখেয়ালি ‘এবডো’ প্রয়োগ করিয়া পাঁচ সহস্রাধিক রাজনৈতিক কর্মী ও নেতাকে রাজনীতি ও নির্বাচনী পদের অযোগ্য করিয়া রাখা হয় । অবশেষে বৃদ্ধ বয়সে পাকিস্তানের সংগ্রামের অন্যতম নেতা জনাব শহিদ সোহরাওয়ার্দী কে গ্রেফতার করিয়া বিনা বিচারে সেলে আটক রাখা হয় এবং তার বিরুদ্ধে বৈদেশিক রাষ্ট্র হইতে অর্থ গ্রহনের মিথ্যা , নোংরা অভিযোগও করা হয় । তারপর ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব যখন কনভেনশন লীগের প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হইলেন , তখন এক বক্তৃতায় তিনি বিরোধীদলিয় রাজনীতিকদের কেরায়া কা টাট্টু ( ভারাটিয়া খচ্চর) বলিয়া গালিগালাজ করেন । এই তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকা সত্বেও দেশবাসী ধারণা করিতে পারে নাই যে , তিনি কায়েদের ভগ্নী মোহতারেমা ফাতেমা জিন্নাহর দেশপ্রেমের উপর কটাক্ষ করিতেও পিছুপা হইবেন না । লাহোরে তিনি তাহাই করিয়াছেন । তিনি বলিয়াছেন যে , কায়েদ আজমের ভগ্নী হইলেও মোহতারেমা মিস ফাতেমা জিন্নাহকে পাকিস্তান কে ধ্বংস করিতে দেওয়া হইবে না । এক্ষনে পরিস্থিতি এই দাঁড়াইয়াছে যে , তিনি এবং তার সঙ্গিসাথি কইপয় মুখ চেনা লোক ছাড়া সকলেই যেন পাকিস্তান ধ্বংস করিতে উদ্যত । মহতারেমা ফাতেমা জিন্নাহ সহ সকল রাজনৈতিক দল  পাকিস্তান ধ্বংস করিতে চায় ; তিনি একাই পাকিস্তান দরদী , তিনি একাই পাকিস্তানের রক্ষক তার বক্তব্যের নির্গলিত অর্থ এই দাঁড়ায় না কি ? বিরোধীদলীয় রাজনীতিকদের কথা বাদ দিলাম । মোহতারেমা ফাতেমা জিন্নাহও পাকিস্তান কে ধ্বংস করিতে চান এবং ফিল্ড মার্শাল আইয়ূবিই পাকিস্তানের একমাত্র রক্ষক – ইহা বিশ্বাস করা না করার ভার দেশবাসীর উপরই ন্যস্ত করা হইল ।

ইহা বেসামাল মনের অভিব্যক্তি । আর ক্ষমতাসীন মহলের বেসামাল হইবার কারণও দেশবাসীর অবিদিত নাই । ২৯ সেপ্টেম্বর ‘ জুলুম প্রতিরোধ দিবস’ পালনের মধ্য দিয়া দেশবাসি ক্ষমতাসীন দের বিরুদ্ধে যে সুনির্দিষ্ট রায় প্রদান করিয়াছে তাতে তাদের বিচলিত বোধ না করিয়া উপায় নাই । বিরোধীদল সংগঠিত হইবার পরে – বিশেষতঃ মোহতারেমা ফাতেমা জিন্নাহর মত দল নিরপেক্ষ , নিঃস্বার্থ সর্বজন মান্য নেত্রীর প্রেসিডেন্ত পদে প্রতিদ্বন্দিতা করিতে অবতীর্ণ হইবার পরে জনমতের যে প্লাবন সৃষ্টি হইয়াছে , তারই অভিব্যক্তি হিসাবে ২৯ শে তারিখের সর্বত্র অভূতপূর্ব হরতাল সভা ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় । মন কে অন্যভাবে স্বান্তনা দেবার চেষ্টা করা হইলেও জনমতের এই গতিধারা লক্ষ্য করিয়া ক্ষমতাসীন মহল ত্রাসিত ও হতোদ্যম । এই মুহূর্তে তাদের মানসিক ভারসাম্য হারানো অস্বাভাবিক কিছু নয় । অতীতেও দেখা গিয়াছে যে কোন স্বার্থ স্বর্বস্ব ক্ষমতাসীন দলের পতনের পূর্বাহ্ণে তারা দিগ্বিদিক জ্ঞান শুন্য হইয়া যা খুশি বলেন যা খুশি করেন । তাই প্রেসিডেন্ট আইয়ুব কর্তৃক রাজনৈতিক দলগুলোকে গালিগালাজ করা , তাদেরকে বন্য বিড়াল আখ্যায়িত করা সর্বোপরি মোহতারেমা ফাতেমা জিন্নাহর দেশপ্রেমের উপরও কটাক্ষ করা ভবিষ্যতে পরাজয়ের লক্ষন ।

ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব মোহতারেমা ফাতেমা জিন্নাহকে সহজেই দম্ভোক্তি করিয়াছেন । জনমতের প্রতি লক্ষ্য থাকিলে এই মুহূর্তে তার এই দাবী অশোভন অ অসয়োমচিত । তিনি যদি নিজের জয় সম্পর্কে এতদূর স্থিরনিশ্চিত হন তাহা হইলে মৌলিক গণতন্ত্রীদের মারপ্যাঁচ বাদ দিয়া তাঁকে প্রাপ্তবয়স্কদের সরাসরি ভোটে মিস জিন্নাহকে এই চ্যালেঞ্জ দিলেই তার দম্ভোক্তির সতর্কতা থাকিবে । অন্যথায় গোটা দেশ যেখানে আজ একদিকে , সেখানে এই ধরনের দম্ভোক্তির অর্থ কি ? ইহা কি মৌলিক গণতন্ত্রীদের উপর অবাঞ্ছিত সম্পর্কে এবং সর্বশেষ জামাতে ইসলামী বিরোধি দলে থাকিবে না এবং মিস জিন্নাহকে সমর্থন দিবে না বলিয়া অলীক প্রচার করিয়া নিরাশ হইয়াছেন , সেইরূপ আজিকার একটানা জনমতের প্রেক্ষিতে মৌলিক গণতন্ত্রীর উপর প্রভাব বিস্তারের স্বপ্নও অলীক প্রমাণিত হইবে ।

রাজনৈতিক দলের সমালোচনা অবাঞ্ছিত কিছু নয় । কিন্তু ক্ষমতাসীন দল কর্তৃক বিরোধীদলসমূহের আদর্শ ও কর্মপন্থার ভুল ব্যাক্ষা প্রদান – বিশেষতঃ তাদের দেশপ্রেমের উপর কটাক্ষ কর জনসাধারণ কোন কালেই সমর্থন করে নাই । বরং এই ধরনের সমালোচনা ও গালাগালিতে যারা লিপ্ত হইয়াছে , জনমত তাদের বিরুদ্ধে গিয়াছে এবং তাদের ভরাডুবি হইয়াছে । ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল উঠিতে বসিতে তাদের প্রতিক্রিয়া সৃশটি হইয়াছিল , ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব কে তাহা না জাআ থাকিলেও দেশবাসীর তাহা জানা আছে । ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কে যে ভাষায় গালাগালি করিয়াছেন তাহা পরিতাপজনক । দেশব্যপী বিরোধী দলকে যেমন চেনেন , তার দল কে তেমনি চেনেন ।

আওয়ামী লীগ সম্পর্কে তিনি যে মন্তব্য করিয়াছেন তার হেতু কি তা আমরা কিছুটা আঁচ করতে পারি । তিনি বলিয়াছেন যে , আওয়ামী লীগ ‘ জাতীয়তাবাদে’ বিশ্বাস করে , পাকিস্তান শক্তিশালী হউক এমনি ব্যবস্থাদিতে তাদের আস্থা নাই । তাঁর এই ধারণার মূলে কি রহিয়াছে তা ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছু কিছু জানা আছে । আমি আওয়ামী লীগ বা কোন দলের মুখপাত্র হিসাবে নয় , একজন সাংবাদিক এবং এই প্রদেশের একজন অধিবাসী হিসাবে পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের দাবী দাওয়া নিয়া শুধু ‘ইত্তেফাকে’ ও ঢাকা টাইমসে’ লিখিত বিভিন্ন প্রবন্ধেই নয় , প্রেসিডেন্ট আইয়ূবের সহিতও সরাসরি একাধিকবার খোলাখুলি আলোচনা করিয়াছি । ১৯৬১ সালের ১৬ আগস্ট ঢাকাতে সম্পাদকদের এক সভায় আমরা প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারবিহীন প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতির প্রস্তাবিত শাসনতন্ত্রের বিরোধিতা করিয়া বলিয়াছিলাম যে , আমরা পার্লামেন্টারি ধরনের শাসনতন্ত্র চাই , যাতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান দেশের রাজনৈতিক শাসন ব্যবস্থার সমান অংশ ও সমমর্যাদা ভোগ করিতে পারে । আর যদি প্রেসিডেন্সিয়াল ধরনের শাসন ব্যবস্থাই তার একান্ত কাম্য হয় তবে সেখানে এর সংখ্যাসাম্যের প্রশ্ন থাকিবে না এবং প্রেসিডেন্টকে সরাসরি প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে নির্বাচিত হইতে হইবে । এই প্রসঙ্গে আমরা আরো উল্লেখ করিয়াছিলাম যে , পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এই পর্যন্ত যে অবস্থা চলিয়া আসিতেছে তাতে পদে পদে প্রতিটি ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষন্য নীতি অনুসৃত হইয়াছে । উদাহরণস্বরূপ আমরা বলিয়াছিলাম যে , কেন্দ্রীয় চাকুরী বাকুরীতে পূর্ব পাকিস্তানীদের হিস্যা শতকরা ১ ভাগেরো কম; আজ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় দপ্তরে একজন পূর্ব পাকিস্তানী সেক্রেটারী নাই ; যেখানে দেশরক্ষা বিভাগে কেন্দ্রীয় রাজস্বের শতকরা ৬৫/ ৭০ ভাগ ব্যয়িত হয় , সেখানেও পূর্ব পাকিস্তানের হিস্যা উল্লেখেরও অযোগ্য , ব্যবসা বানিজ্য ও শিল্প এক অংশর মুষ্টিমেয় লোকের একচেটিয়া প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে । দেশের পুঁজির শতকরা ১০ ভাগও পূর্ব পাকিস্তানে গঠিত হয়নাই । তাছাড়া বৈদেশিক লোনেরো সিংহ ভাগ ব্যয়িত হইয়াছে পূর্ব পাকিস্তানে । ইহার পর আবার করাচী হইতে ফেডারেল রাজধানী অপসারন করিবার কালে সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব পাকিস্তানের কথা বিবেচনা না করিয়াই পিন্ডি ও ইসলামাবাদে ফেডারের রাজধানী স্থানান্তরিত করিয়া জাতীয় সম্পদ হইতে তথায় শত শত টাকা ব্যয় করা হইতেছে । এমতাবস্থায় পার্লামেন্টারি শাসন ব্যবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানীদের একমাত্র স্বান্তনা ছিল যে , রাজনীতির ক্ষেত্রে অন্ততঃ তাঁদের সমান অধিকার রহিয়াছে এবং এই অধিকার প্রয়োগ করিয়া কালক্রমে তারা সকল বৈষম্য ও অবিচারের অবসান ঘটাইতে পারিবে । কিন্তু স্থিতিশীলতার নাম করিয়া দেশে যদি এমন ব্যবস্থা প্রবর্তন রা হয় যাতে সকল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাও এক ব্যক্তির হস্তে এই একই অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হয় তবে পূর্ব পাকিস্তানীদের সেই স্বান্তনার পথটুকও রুদ্ধ হইবে ।

আর অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়াছিলাম যে , পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিশেষতঃ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ করিয়া গড়িয়া তোলার জন্য অতঃপর পূর্ব পাকিস্তানের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রাসহ তাদের নিজস্ব সম্পদকে পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়ন কার্যে নিয়োজিত করিবার সুযোগ দেয়া হোক । বৈদেশিক কর্জ সম্পর্কে আমাদের প্রস্তাব ছিল যে , পূর্ব পাকিস্তান যে পরিমান বৈদেশিক লোন করিবে সে তাহা সুদে আসলে পরিশোধ করিবে । আমরা তখন মনে করিয়াছি যে , পূরব পাকিস্তান কে বৈষম্যের অভিশাপ হইতে সত্যিকারভাবে মুক্ত করিতে হইলে ইহাই ন্যুনতম কার্যকরী ব্যবস্থা । ইহার দ্বারা পাকিস্তানের অখন্ডত্ব বিপন্ন হইবার প্রশ্ন নাই ইহার দ্বারা পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতির উপর হামলা করিবার প্রশ্ন নাই । ব্রং ইহা একটি উদার প্রস্তাব । কিন্তু যে মুষ্টিমেয় লোক দেশের গোটা সম্পদের উপর কর্তৃত্ব বিস্তার করিয়া বসিয়া আছেন যারা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সাধারন মানুষের মঙ্গলামঙ্গল উপেক্ষা করিয়া নিজেদের কর্তৃত্ব ও ভোগ বিলাস কেই প্রাধান্য দিয় থাকেন যারা পূর্ব পাকিস্তান কে তাদের মিল কলে উৎপাদিত পন্যের বাজার হিসাবে গন্য করিতে চান তারা এই প্রস্তাবকে বিকৃত করিবার চেষ্টা  করিবেন জানি কিন্তু আমাদের মনে কন দুরভিসন্ধি নাই বরং পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি যে অবিচার করা হইয়াছে তাহাও ভুলিয়া গিয়া পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ দ্বারা পূর্ব পাকিসতানের উন্নয়ন  বিধান করিয়া পাকিস্তানের উভয় অঞ্চল কে একিভাবে সুখী ও সমৃদ্ধিশালী করাই আমাদের লক্ষ্য ।

সহজভাবে চিন্তা করিলে ‘ বাঙালি জাতিত্ব বোধ’ অপরাধের কিছু নাই । বাঙালি পাঞ্চাবি , পাঠান , সিন্ধি , বেলুচ মিলিয়াই পাকিস্তান । বাঙ্গালি নিজেকে পাথান বলিয়া জাহির করিলে কিংবা পাঞ্জাবি মুখে বাঙালি বলিলে জাতীয় সংহতি গড়িয়া ওঠে না বরং উহা মোনাফিকেরি নামান্তর । পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের অংশবিশেষ । কিন্তু যে মাটি আমাদের ধারণ করিয়াছে , যে জলবায়ু সেবন করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি সেই মাটি সেই দেশ সেই মানুষকে ভুলিয়া কিংবা তার তরক্কীর প্রশ্ন বাদ দিয়া আমরা ভুয়া দেশপ্রেমিক সাজিতে চাই না । বাঙালীর পাকিস্তান সংগ্রামে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহন করিয়াছে । বন্দুক কামান বা কোন ব্যক্তিবিশেষের শলতিশালি নেতৃত্বে পাকিস্তান অর্জিত হয়নাই । মানুষ নিয়া দেশ । আর পাকিস্তানের শতকরা ৬৫ ভাগ বাস করে এই পূর্ব বাংলায় । তাঁদের প্রতি সুবিচার ও তাদের ন্যায্য অংশ দাবি করিলে যদি বিকৃত অর্থ ইহাকে বাঙালি জাতিত্ব বলা হয় তবে সেখানে আমরা নাচার । পাকিস্তানের সংহতির নামে মুষ্টিমেয় লোক তাদের ভাগ্য গড়িয়া তুলিবে , ইসলামাবাদের জৌলুস বৃদ্ধি পাইবে আমরা তাকে গোটা পাকিস্তানের জৌলুস বলিয়া মানিয়া নিব তাহা হইতে পারে না । আমরা দুনিয়াবাসীকে দেখাইয়াছি যে , পূর্ব পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠ হইয়াও জাতীয় সংহতি ও পাকিস্তানের তরক্কির জন্য সংখ্যাসাম্য মানিয়া নিয়াছিল । যে আওয়ামী লিগের বিরুদ্ধে “বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ” ভাবধারার এবং পাকিস্তান কে শক্তিশালী না করিবার অভিযোগ আনয়ন করা হইয়াছে ফিল্ড মার্শাল  আইয়ূবের অবগতির জন্য উল্লেখ করা দরকার যে , তারাই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্য সংখ্যাসাম্য নীতি সর্বাগ্রে মানিয়া নিয়াছিলেন । এবারেও আসন্ন নির্বাচনে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামের নেতৃত্ব পূর্ব পাকিস্তানিরা মোহতারেমা মিস ফাতেমা জিন্নাহর অপর অর্পণ  করিয়াছেন । ইহার পরো আমাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কে দুর্বল করিবার অভিযগ আনয়ন করিলে তাকে উদ্দেশ্যমূলক ছাড়া আর কি বলা যাইতে পারে । মেষশাবক কে ভক্ষন করিতে হইলে অজুহাতের অন্ত কি । কিন্তু এই পথে কাহারো হালে পানি পাইবার উপায় নাই ।