2

মৌলিক গণতন্ত্রেরভিত্তিতে প্রথম অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচন সম্পর্কে প্রতিবেদন

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
মৌলিক গণতন্ত্রের ভিত্তিতে প্রথম অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন কাউন্সিল নির্বাচন সম্পর্কে প্রতিবেদন সরকারি ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০

 

মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচন  নিয়ে প্রতিবেদন

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন,  টাউন কমিটি, ৪ স্তরীয় মৌলিক গণতন্ত্রের বেস ২৬ ডিসেম্বর ১৯৫৯ সালে মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ, যা ১৯৫৯ সালে প্রেসিডেন্ট এবং সরকার কর্তৃক প্রতিশ্রুত চতুর্থ অধ্যায়ের অধীনে ঘোষিত হয়েছে। যদিও অধিকাংশ ওয়ার্ডে আগেই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে তারপরও নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার ঘোষনা এসেছে ১ ফেব্রুয়ারিতে।

 

নির্বাচন বিধিমালা:

আবহ এবং নির্বাচনের রুলস প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক প্রণীত হয় যা জনসাধারণের কাছ থেকে অভূতপূর্ব আগ্রহ এবং প্রত্যাশা তৈরি করেছিল। ১০৫০ ব্যক্তির জন্য  একজন করে নির্বাচিত হইবেন, এই  হারে আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ জন্য এই নিয়ম প্রদান করা হয়  যাতে ইউনিয়ন এবং টাউন কমিটির আকার এবং   প্রকৃতি দক্ষ প্রশাসনের জন্য উপযুক্ত হয়।

নির্বাচন পদ্ধতি হিসাবে এই নিয়মগুলো ছিল:

১) নির্বাচন রোলস আইন ১৯৫৭ এর অধীন প্রস্তুতকৃত ভোটার তালিকা  অনুমোদিত ভোটার তালিকা ছিল,

২) ব্যালটের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা হয়েছে,

৩) যেখানেই প্রশাসনিকভাবে সম্ভব সিঙ্গেল সদস্য ওয়ার্ড গঠন করা হয়েছে ,

৪) পুরুষ ও নারীদের আলাদাভাবে ভোট দিতে হবে,

৫) ব্যালট বাক্স প্রার্থীদের দ্বারা সরবরাহ করা হয়।

৬) ভোট অবিলম্বে পোলের শেষে দৈনন্দিন গণনা করা হয়েছিল এবং এর ফলাফল সেখানে এবং তখনই ঘোষণা করা হয়।

৭) নির্বাচন বিধিমালা এছাড়াও নির্বাচিত এবং নিযুক্ত সদস্যদের নাম বিজ্ঞপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান নির্বাচনের জন্য বিধি জারি করে।

৮) কমিশনার ও সংগ্রাহক নির্বাচন পিটিশন নিষ্পত্তি করার ক্ষমতার সঙ্গে বিনিয়োগ করা হয়। এই বেঙ্গল ভিলেজ স্বয়ং সরকার আইন ১৯১৯ অনুযায়ী বিগত অনুশীলনের সঙ্গে সাদৃশ্য ছিল।

ইউনিয়ন ও শহরের ঘোষণা:

প্রদেশের গ্রামাঞ্চলকে ৪০৫৬টি ইউনিয়নে বিভক্ত করা হয়েছে।  ৫৬টি পৌরসভার ২৮টিকে টাউন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট ২৮টি পৌরসভার ১৮৩টিকে আরবান ইউনিয়নে বিভক্ত করা হয়েছে।

 

ইউনিয়ন গুলোর সংখ্যা ও সীমানা অনুসারে পরিবর্তন করা হয়েছিল যাতে প্রতি ১০৫০০ জানের  জন্য একটি স্থানীয় কাউন্সিল গঠন করা যায়। বিশেষত,অল্প সময়ে এলাকাগুলো একেকটি সম্ভাবনাময় এবং প্রশাসনিক সম্পদ হয়ে উঠে পুরোদমে। এছাড়া,বিভাগ ছিল ৪০০০০।  এই কাউন্সিল গুলোর মধ্যে মৌজা গুলোও  অন্তর্ভুক্ত ছিল যা পাকিস্তানের হস্তগত হয় ১৫ জানুয়ারি ১৯৫৯ সালে। প্রশাসনিক সদস্যদের জন্য ঐ এলাকাগুলোয় মানুষজন নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারতনা। কেননা ১৯৫৭  কিংবা ১৯৫৯ সালে তাদের জন্য কোনো নির্বাচনী তালিকা তৈরি হয়নি।  সাধারণ ভাবে এই ইউনিয়ন কাউন্সিল গুলো গঠিত হয়েছিল ৩টি উদ্দেশ্যে –
১) প্রতিটি উপজেলার অধীনে কতগুলো ইউনিয়ন গঠন করার জন্য।
২) ১০৫০০ জনসংখ্যার সুষম বন্টনের জন্য।
৩) প্রতিটি ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারনের জন্য।নতুন ছোট ছোট ইউনিয়নে জনসংখ্যা বন্টন এবং বড় বড় ইউনিয়নগুলোতে

সুষম জনসংখ্যা বন্টনের ফলে ঐ অন্চলের মানুষদের নির্বাচনে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল।মূলত গ্রাম বাংলার স্বায়ত্বশাসিত সরকারের অধীনে ৩,৫৮৩ টি ইউনিয়ন ছিল। এছাড়া পনেরটি জেলায় কিছু পঞ্চায়েতি ইউনিয়নও ছিল।এছাড়া সিলেট ও চট্রগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে প্রায় ১০০০ চৌকিদারী অঞ্চল ছিল। অবশ্য নতুন এলাকাগুলোর প্রত্যেক প্রার্থীদের ভোটারদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ ছিল না। ভোট সংরক্ষনের জন্য অন্যতম একটি কারণ ছিল এই অন্তরঙ্গতা বা সম্পৃক্ততা।নভেম্বর মাসের শেষের দিকের আগেই ইউনিয়ন কমিটি, শহর এবং ইউনিয়ন এর সীমানা নির্ধারণ আর নির্বাচনীয় ভূমিকার বিভক্তি উল্লেখযোগ্য ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

ওয়ার্ড  গুলোর সংখ্যা নিম্নরূপ:
১) একক সদস্যবিশষ্ট ওয়ার্ড – ১৬৬৮৯
২) দুই সদস্যবিশিষ্ট ওয়ার্ড -৫৭৬৫
৩) তিন সদস্যবিশিষ্ট ওয়ার্ড – ৩০৪৯
৪) বহু সদস্যবিশিষ্ট ওয়ার্ড[তিন সদস্যের অধিক] – ৫০৯

এখানে দুটি জেলার নাম বিশেষভাকে উল্লেখ করা যেতে পারে।
সিলেট ও চট্রগ্রামের পার্বত্য অন্চল যেখানে কোনো ইউনিয়ন বোর্ড ছিলনা। এই প্রদেশের অন্যান্য জেলার মত সিলেটে কোনো ইউনিয়ন গোপন ভান্ডার ছিলনা।প্রতি একটি সিটে ১০৫০০ জন  এই নীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিটি গ্রাম্য ইউনিয়নে ২৮৬০ টি নির্বাচনীয় সিট বরাদ্দ করা হয়। এই নির্ধারণীর মধ্যে চা বাগানগুলোও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সত্যিকারভাবে ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারণ,উপরোক্ত মান অনুযায়ী চৌকিদারী বলয়ের অনূরূপ যতদূর করা সম্ভব করা হয়েছিল। চট্রগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল,একমাত্র জেলা ছিল যেখানে সবচেয়ে বেশি অমুসলিম  (উপজাতি ও বৌদ্ধ) জনগন বসবাস করত। সেখানেও সমান নীতির ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ করা হয় এবং এর সংখ্যা ছিল  ২৭০। মৌলিক গনতন্ত্রের উদ্দেশ্য,৩ লক্ষ জনগনের এই পুরো জেলাটিকে তিনটি মহকুমার আওতায় ৩১টি ইউনিয়নে বিভক্ত করা হয় যার প্রত্যেকটিকে থানা হিসেবে ঘোষনা করা হয়।

 

সরকারের কাছে একটি একক ওয়ার্ড আকািঙ্ক্ষত ছিল। জাতীয় নির্বাচনের জন্য অনুমোদিত নির্বাচনী তালিকা প্রস্তুত ছিল কিন্তু তা জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত ছিল না। বিশেষ করে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একাধিক সদস্য বিশিষ্ট ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন সমূহের একটি তালিকা সংযুক্তি করা হল।

মনোনয়নপত্র ও তাদের তথ্য-উপাত্তঃ

নিম্নলিখিত পরিখ্যান আমাদের লক্ষ্যনীয় বৈশিষ্ঠ দেখায়ঃ

(ক) দায়েরকৃত মনোনয়ন পত্রের সংখ্যা-৮৭১৯০

(খ) মনোনয়ন প্রত্যাহার-৬০৪০

(গ) প্রত্যাখ্যাত মনোনয়নপত্র-৬০৪০

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশনা ছিল, যেন ভিত্তিহীন যুক্তিতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাখ্যান না করা হয়।

মনোনয়নপত্র প্রত্যাখ্যানের কারন গুলো ছিলঃ

(ক) মৌলিক গনতন্ত্রের ধারার দ্বীতিয় সূচীর (Pan II) বর্নিত যে কোন ধরনের অযোগ্যতা প্রার্থীর মাঝে বিদ্যমান থাকলে।

(খ) মনোনয়ন প্রার্থী, প্রস্তাবক বা সমর্থক দ্বারা দ্বাক্ষরিত না হয়ে থাকলে।

(গ) যদি প্রার্থী প্রস্তাবক বা সমর্থকের স্বাক্ষর যদি প্রশ্নবিদ্ধ/ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় এবং তা আসল সত্য প্রমানে ব্যার্থ হয়।

(ঘ) প্রার্থীর বয়স ২৫ বছরের নিচে হলে।

(ঙ) প্রার্থীর নাম ইউনিয়নের ভোটার তালিকায় অনুপস্থিত থাকলে।

(চ) মনোনয়নপত্রের ঘোষনায় প্রার্থীর স্বাক্ষর না থাকলে।

(ছ) প্রার্থীরা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত থাকলে।

প্রতিদ্বন্দীতা বিহীন মোট ৭০৮৩ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিল। মোট ১৪ টি আসনে কোন মনোনয়ন দায়ের হয়নি। যার মাঝে ১০টি বগুড়ায়, ৩টি রাজশাহী এবং একটি খুলনায় অবস্থিত।

 

প্রচার প্রচারণা :

মৌলিক গণতন্ত্র পুরনো প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি হতে একটি কৌনিক দূরত্বে পৌছে গিয়েছিলো। একটি বিশাল প্রচার প্রচারণার প্রয়োজন ছিলো জনগণকে সন্তুষ্ট করার জন্য। এই প্রদেশের মানুষ যেন মৌলিক গণতন্ত্রে প্রতিষ্ঠিত ইউনিয়ন ও জেলা বোর্ড গ্রহণ না করে সেই প্রচেষ্টা করা হয়েছিলো। ২রা সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে ঢাকা রেডিও স্টেশন হতে মৌলিক গণতন্ত্র সম্পর্কিত সকল প্রকার জনপ্রচারণা বন্ধ করা হয়। পুনর্গঠন ব্যুরো কর্তৃক কয়েকটি নিবন্ধন জারি করা হয় প্রেসগুলাতে। যা বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়েছিলো।

 

১৯৬৫ সালের নভেম্বরে,মৌলিক গনতন্ত্রের উপর ৫০০০০ পোস্টার বের করা হয়েছিল এবং প্রদেশটির সর্বত্র বিলি করা হয়েছিল। ৪টি বিশেষ পুস্তিকা সবজায়গায় বিলানো হয়েছিল যে গুলো মৌলিক গনতন্ত্রের উপর লিখা গান ছিল।বিশেষিত বাঙালি লেখকরা গান গুলোর কথা ও সুর সম্প্রদান করেছিলেন।আরো ৯টি পুথিকায় বিশেষত রাজনীতিবিদ লেখকদদের দ্বারা মৌলিক গনতন্ত্রের প্রধান বিষয়  গুলোর উপর লেখা ছিল এবং এটিও সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া হয়।
মৌলিক  গনতন্ত্রের উপর জোরদার প্রচারনা চালানোর জন্য ৪৩টি রেডিও সেটকে বিভিন্ন জেলা থেকে একক ভাবে স্থাপন করা হয়।প্রায় মৌলিক গনতন্ত্রের উপর অনুচ্ছেদ পত্রিকায় ছাপানো হতো।পাশাপাশি,জনমতামত এবং সরকার যেএই বিষয়ের উপর বিভিন্ন জেলায় প্রচারকার্য চালাচ্ছে তাও পত্রিকায় ছাপানো হতো।
১৯৫৯ সালের ডিসেম্বরে রংপুর,রাজশাহী,বগুড়া,যশোর,ময়মনসিংহ,কুষ্টিয়া,চট্রগ্রামপার্বত্য অন্চল ও নোয়াখালিতে জেলা মোবাইল একক দ্বারা ১৬ এমএম সাজসজ্জা বিশিষ্ট প্রোজেক্টর দেয়া হয়েছিল মৌলিক গনতন্ত্রের উপর ছবি বানানোর জন্য।অন্যান্য জেলায় এই প্রোজেক্টর  এর সরবারহ করা হয় ৩৫ এমএম।
ঢাকা এবং চট্রগ্রামে দুটি বাংলা নাচক নামানুসারে “গ্রামের মায়া” ও “শঙ্খ” লেখে স্টেজে প্রদর্শন করা হয়।
দুটি পুস্তিকায় মৌলিক  গনতন্ত্রের অাদেশ ও নিরবিচ্ছিন্ন নীতিমালা বাংলায় লিখে প্রদান করা হয়।
একটি বিজ্ঞাপন পত্রে প্রার্থীদের  জন্য মৌলিক গনতন্ত্র বিষয়ক নির্দেশনা প্রধান করা হয়।
প্রচারকার্যের উপাদান গুলো প্রদেশীয় ও কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা ১২০৮৩৩৭ সংখ্যায় প্রদান করা হয় ও বিলানো হয়। পাশাপাশি বেশিরভাগ প্রেসে ২০২ এর মাঝে মৌলিক গনতন্ত্র বিষয়ক তথ্য বের করে।
একাধিক সংখ্যক বিখ্যাত গান কম্পোজ করা হয়েছিল  মৌলিক গনতন্ত্রের উপর এবং অতি বিখ্যাত শিল্পীদের দিয়ে সুর করা হয় এবং গায়কদের শিখানো হয় যারা পরে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে গান গেয়েছিল।
প্রচারকার্য অায়োজন ও গঠন করতে পূর্নগঠন দলটি অভাবনীয় ভূমিকা পালন করেছিল।

 

প্রশাসনিক ব্যবস্থাঃ নির্বাচনের আবহ সৃষ্টির জন্য ইউনিটগুলো দুই বা তিনটি থানায় পরিমন্ডল নিয়ে গঠিত ছিলো। পরিধিভুক্ত অফিসাররা ছিলো গেজেটেড। সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল ব্যতীত অন্যান্য স্থানে যেখানে রিটার্নিং অফিসার অনুপস্থিত ছিলো সেখানে নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। ঢাকা ও চট্টগ্রামে নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। অনেক জায়গায় উপ রেজিস্ট্রার, খাদ্য পরিদর্শক, উপ বিভাগীয় বিদ্যালয় পরিদর্শকগণ, কো-অপারেটিভ সোসাইটির পরিদর্শকগণ এবং ত্রাণ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো।

 

গেজেটবিহীন সরকারি কর্মকর্তা যেমন: রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ সার্কেল পরিদর্শকগণ, স্কুলের উপ-পরিদর্শকগণ,কো-অপারেটিভ সোসাইটির সহকারী পরিদর্শক, আনসারের সহকারী এডজুট্যান্ট ইত্যাদি তাদেরকে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তহশিলদার এবং রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ সরকারী তহশিলদার, প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক, ইউনিয়ন কৃষি অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং কয়েকজন কালেক্টরেট  কেরানী ও সাব ডিভিশনাল অফিসার সহকারীদের প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।

প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশের দুইজন কনস্টেবল ও তিনজন আনসারকে নিয়োগ করা হয়েছিল আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও কেন্দ্র পরিচালনার জন্য। উপ-পরিদর্শক ও সহকারী উপ-পরিদর্শক ইউনিয়ন পরিদর্শন করতেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানের জন্য।

ভোটকেন্দ্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থা মাধ্যম তৈরী করা হয় বিভিন্ন ইউনিয়ন বোর্ড, বেশিরভাগ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত কৃষি সহকারী কর্মকর্তা এবং তহশিলদারদের মাধ্যমে। অতিরিক্ত দাপ্তরিক কাজের জন্য জেলা সদর দপ্তর থেকে উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তাদের এবং সেকেন্ড অফিসারদের নিয়োজিত করা হয়েছিল। সার্ভার প্রক্রিয়াকরণ ও নোটিশ বহন ইত্যাদির জন্য কিছু ক্ষেত্রে খন্ডকালীন লোক নিয়োগ করা হয়েছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে গ্রাম্য লোকদেরও ব্যবহার করা হয়েছিল।

নারী ভোটারদের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি ভোট কেন্দ্র এবং আলাদা ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। শহরাঞ্চলে মহিলা প্রিসাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসার নিয়োগ করা হলেও গ্রামাঞ্চলে এই বিশেষ সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

স্বল্প সময়ে বিশাল পরিসরে অভূতপূর্ব এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৪০০০০ সদস্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনটি যুগপৎ ১৫০০০ ভোট কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় ।

নিচের পরিসংখ্যানটি এই কাজের মাত্রা তুলে ধরে:

ক) মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৮২১

খ) মোট ভোটের বুথ সংখ্যা ২৮৯০৯

গ)মোট রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার ৪০০ প্রায়

ঘ)মোট প্রিসাইডিং অফিসার ১৬০০০

ঙ)মোট সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার ৫০০০০

চ)মোট পুলিশ কনস্টেবল, চৌকিদার এবং আনসারদের নিযুক্তির সংখ্যা ৮০০০০

২০-২৫টি ইউনিয়নে প্রতিজন রিটার্নিং অফিসার প্রায় ৩০০ জন সদস্য নির্বাচিত করেন এবং এই কাজ তাঁরা করেন কোন রকম ত্রাণ বা অন্যান্য সাহায্য ছাড়াই ।

ত্রাণসাহায্য না পাঠানোর কারণে, কর্মকর্তাদের কোন কোন ক্ষেত্রে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ রেখে ঘড়ির কাঁটা ধরে শ্রমসাধ্য এ কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে।

এছাড়াও নির্বাচনী ক্রমনির্বাচনে বিশেষ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল । জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতকৃত এই তালিকা হালনাগাদ করা ছিল না এবং নাম ও ভোটারদের বয়স সংক্রান্ত বিশাল আকারের ভুল ছিল ।

 

প্রত্যেক গ্রাম, মৌজা বা সড়কের নাম থেকে নামানুক্রমিক ক্রমনম্বরগুলো মৌলিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য ব্যবহার করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণযোগ্য আকারের চেয়ে বেশি জনবহুল গ্রাম বা মৌজা, এরকম কয়েকটি স্থানে বিশাল সমস্যা তৈরি হল। বিশেষ করে আমাদের দৃষ্টিতে, এত অল্প সময়ে ক্রমনম্বরগুলোকে ভেঙ্গে সুবিধা জনক আকারে গড়া সব কয়টি স্থানে সম্ভব ছিল না। পাশাপাশি, এ কাজে প্রচুর খরচ ও পরিশ্রম হচ্ছিল। তাই সরকারের এক সদস্যবিশিষ্ট ওয়ার্ড চাওয়া সত্বেও অনেক জায়গায় দুই,তিন অথবা আরো বেশি সদস্যবিশিষ্ট ওয়ার্ড তৈরি করতে হয়েছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি ওয়ার্ডে  ১৬ এর চেয়ে বেশি সদস্য ছিল।

নদীতীরবর্তী কয়েকটি এলাকায় গ্রাম বা গ্রামের কিয়দংশ বন্যায় ভেসে গিয়েছিল, ১৯৫১ সালের আদমশুমারির পর নতুন কিছু এলাকা গঠন করা হয়েছিল এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচনী ক্রমে অন্তর্ভুক্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী আসন বণ্টন করা হয়েছিল। কিন্তু বণ্টিত আসনগুলোতে প্রকৃতপক্ষে আদমশুমারির ফলাফল বা ভোটার তালিকার প্রতিফলন ঘটেনি।

বেশ কিছু নির্দেশনা, বিশেষ করে প্রার্থীদের অযোগ্যতা বিষয়ক নির্দেশনা পৌঁছতে দেরি হওয়ায় প্রশাসনিক কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়। যথাসময়ে ইবিডিও কর্তৃক অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা না পাওয়ায়, চুড়ান্ত পর্যায়ে বেশ কিছু মনোনয়ন পত্র বাতিল করতে হয়।

ভোট নেয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে প্রার্থীগণ কর্তৃক ব্যালট বাক্স সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতা কয়েকটি স্থানে অশিক্ষিত প্রার্থীদের জন্য কিছু জটিলতা তৈরি করে।

মৌলিক গণতান্ত্রিক নীতির উপর রাজনৈতিক প্রভাব এবং এর আওতায় প্রথম নির্বাচন:

শুরুতে কমিউনিস্টরা এবং আওয়ামী লীগ ও অধুনালুপ্ত ন্যাপের অনেক বিশিষ্ট নেতা মিলে নির্বাচনটি বয়কট করতে চেয়েছিল। তারা এমন একটি গুজব ছড়ায় যে মৌলিক গণতন্ত্র বর্তমান শাসনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের একটি ছদ্মবেশী কৌশল এবং এতে [জনপ্রতিনিধিদের ওপর] নির্ধারিত ক্ষমতাসমূহের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। সরকার কর্তৃক মনোনয়ন এবং ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ চরমভাবে সমালোচিত হয়।

শুরুর দিকে এ ধারণাটির ব্যাপারে [জনসাধারণের] অজ্ঞতা এবং ঔদাসীন্য বিরাজ করছিল। রাজনৈতিক দলের  অনুপস্থিতি এবং ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডের সীমানা দেরিতে চূড়ান্তকরণের কারণে রাজনৈতিক এবং  প্রশাসনিক সমস্যাগুলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে আগ্রহী প্রার্থীদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। একটি বৃহৎ পরিসরের জনসংযোগ করার ফলে  নির্বাচনে জনগণের তীক্ষ্ণ মনোযোগ নিশ্চিত হয়। নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর জনগনের আস্থা শুরুতে অল্প হলেও পরে দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। জনগনের মতামতের পরিবর্তন দেখে, নতুন নিয়মের নিন্দুক এবং সমালোচকরা তাদের কৌশল পরিবর্তন করল এবং সিদ্ধান্ত নিল সেসব প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার বা সেসব প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার, যাঁরা তাদের মত অনুযায়ী পরবর্তীতে, যারা তাদের কথায় প্রভাবিত হবেন বা মগজ ধোলাইয়ের শিকার হবেন। তাদের মনোভাবে যে সত্যের অপলাপ ছিল তা তাদের অসুবিধাজনক অবস্থার ফেলে দেয় কারণ নিজেদেরকে সংগঠিত ও সন্নিবেশিত করার যথেষ্ট সময় তাদের কাছে ছিল না। ২৯৬ জন বামপন্থী নেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এ সংখ্যা খুবই কম; এ ব্যর্থতা বামপন্থী নেতাদের মনোভাবের ভিন্নতার কারণে, সুযোগের সদ্ব্যবহারের এবং মুক্ত প্রচারণার অভাবে ঘটিত।

নির্বাচনের জনগনের অবাধ অংশগ্রহন এবং যার ফলে ব্যাপকহারে ভোট পড়ে নিম্নলিখিত কারণে, পাশাপাশি আরও কিছু কারণ ছিল:

 

(খ) নতুন ইউনিয়ন কাউন্সিলগুলোর বৃহত্তর ক্ষমতা এবং সে অনুযায়ী আরো অধিক মানুষের সেই ক্ষমতা ও তার সুফল ভাগ করে নেবার ইচ্ছা

(গ)  এই প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে একমাত্র নির্বাচিত সংস্থা হওয়ায় জনগণের গণতান্ত্রিক আকাংখা তীব্রতর হয়েছিল।

(ঘ) সামাজিক ও পারিবারিক বিরোধসমূহ তুমুল প্রতিযোগীতা তৈরিতে একটা বড় ভূমিকা পালন করে।

(ঙ) জনগোষ্ঠীর যে অংশটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা নিগ্রহের ভয়ে নিষ্ক্রিয় বা নিরপেক্ষ থাকতো, তারাও তখনকার শান্ত পরিস্থিতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছিলো।

(চ) ভোটকেন্দ্রগুলো কাছাকাছি হওয়ায় এবং নারী-উত্যক্তকারীদের দমন করায় প্রচুর সংখ্যক নারীভোটার ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন।

 

নির্বাচনে বিভিন্ন দলের ভূমিকাঃ

 

সংখ্যালঘুঃ “দ্য হিন্দু মহাসভা” এই নির্বাচনে একটি সংগঠিত দল হিসেবে অংশ নেয় এবং হিন্দু আধ্যুষ্যিত এলাকাগুলোর পাশাপাশি যে সমস্ত স্থানে হিন্দু ভোট ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে সে সব এলাকায়ও প্রার্থী ঘোষণা করে।  কংগ্রেস এই নির্বাচনে দলগতভাবে কোন প্রার্থী ঘোষণা করে নি।  কিন্তু, তারা অন্যান্য হিন্দু প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছে অথবা বিলুপ্ত ন্যাপ এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিক্ষুব্ধ  গোষ্ঠীর সাথে মিলিতভাবে নীরবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। বিগত ইউনিয়ন বোর্ড নির্বাচনের তুলনায় এবারে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এবং  প্রতিদ্বন্দ্বীতার পরে, উভয়ক্ষেত্রেই নির্বাচিত হিন্দু প্রার্থীদের সংখ্যা বেশি ছিলো। এটা হয়েছিলো মূলত দুইটি কারণেঃ

 

ক) বহু সদস্য বিশিষ্ট ওয়ার্ডগুলোতে তারা একজন মাত্র প্রার্থী ঘোষণা করে এবং সকলে তাকেই ভোট দেয়। সাধারণতঃ হিন্দু প্রার্থীদের মধ্যে কোন প্রতিযোগীতা হয় নি এবং তারা অপরাপর মুসলিম প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোটে সুসংহতি বজায় রেখেছিলো।

 

খ) যে সমস্ত এলাকায় ভোটের সংখ্যাসাম্য বিরাজ করছিলো, সেখানে তারা ডানপন্থীদের ছাড়া   অন্যান্য প্রার্থীদেরকে সমর্থন দিয়েছিলো।  (এই প্রদেশে হিন্দুদের মনোভাব বরাবরই এরকম ছিলো। মুসলমানদের মধ্যে তারা বামপন্থী ও অন্যান্য বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীকে সমর্থন দিতো। )

 

কম্যুনিস্টঃ কম্যুনিষ্টরা তাদের  সুপরিচিত সদস্যদের প্রার্থী ঘোষণা করে নি। কিছুক্ষেত্রে তারা পরিচিতি নেই এমন দলীয় সমর্থকদের প্রার্থী ঘোষনা করে কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডানপন্থীদের সাথে কোন অতীত সম্পর্ক নেই এমন প্রার্থীদের সমর্থন দেয়। এধরণের প্রার্থীরা হিন্দুদের সমর্থনও পেয়েছিলো, যদিও তা সম্পুর্ন ভিন্ন কারণে।

 

ন্যাপঃ ন্যাপ শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচনে অংশ নেবার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তারা কম্যুনিস্ট এবং হিন্দু, উভয় দলের সাথেই হাত মেলায় যেহেতু তারা মানানসই ছিলো। যদিও তারা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী দিতে পারেনি, তবু, কম্যুনিস্টদের মতই তারা তুলনামুলক ভাবে কম-অগ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিলো।

 

ন্যাপ এবং কম্যুনিস্ট উভয় দলেরই ইউনিয়ন কাউন্সিলগুলোতে নিজেদের জায়গা তৈরি করার পিছনে উদ্দেশ্য ছিলো এমন একটা গ্রুপ তৈরি করা, কাউন্সিল কাজ শুরু করার পর যাদের সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ তৈরিতে ব্যবহার করা যায়। সম্ভবত তারা এজন্যে কাউন্সিলে তহবিলের অপর্যাপ্ততা এবং সত্যিকার অর্থে ক্ষমতার অনুপস্থিতির দিকে আঙুল তোলার পরিকল্পনা করেছিলো।

তারা তীব্র ও তীক্ষ্ণ সমালোচনার দৃশ্যপটটি প্রদেশের উন্নয়ন খাতে লুপ্ত আইনসভা বা ইউনিয়ন কাউন্সিল হতে তহবিল না পাওয়ার দিকে ঘুরিয়ে দিত।

 

আওয়ামী লীগ- নিষ্প্রাণ আওয়ামীলীগ নির্বাচনে কোন কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে নি। ইতোমধ্যেই তারা নিন্দিত হয়েছে এবং কোন ভাবেই আর নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারবে না। আওয়ামীলীগের বামপন্থী গ্রুপ ন্যাপ অথবা কম্যুনিজমের সাথে একাত্নতা ঘোষণা করেছে। আওয়ামীলীগের কিছু প্রভাবশালী নেতা অবশ্য নির্বাচনে লড়েছেন।

 

কে এস পি- কে এস পি বরাবরই একটা শিথিল এবং ঢিলা দল। দল ভেঙ্গে যাওয়ায় এটি মোটামুটি দমে গেছে। নিষ্প্রাণ কেএসপির অধিকাংশ নেতা যারা আসলে মুসলিম লীগের ছিল, সম্ভবত তাদের নিজেদের স্বরূপ চিনতে পেরেছেন এবং নির্বাচনে লীগ ঘেষা প্রার্থীদের সমর্থণ দিয়েছেন।

 

মুসলিম লীগ- নিষ্প্রাণ মুসলিম লীগ গোড়া গণতন্ত্রের ধারণাকে সমর্থণ করেছিলেন। যেহেতু তাদের কোন শক্তিশালী পার্টি সংগঠন ছিল না, এমনকি দল শিথিলিকরণের সময়ও, সেহেতু নির্বাচনে তাদের খুব বেশী প্রভাব ছিল না। অন্যদিকে গ্রাম এলাকার লোকজন যারা কিছু বছর আগে মুসলিম লীগের আদর্শের প্রতি সমর্থণ দিয়েছিল, তারা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মুসলিম লীগ ঘেষা প্রার্থীদের নির্বাচিত করেছে।

 

নিজাম-ই-ইসলাম- প্রাক্তন নিজাম ই ইসলামও গোড়া গণতন্ত্রের ধারণাকে সমর্থণ দিয়েছিল, যদিও কাউন্সিলে পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্যাণ্ডিডেট নির্বাচনে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

 

যে ধরনের মানুষ নির্বাচিত হয়েছেন:

৪০ শতাংশ নির্বাচিত সদস্য হচ্ছেন পুরনো ইউনিয়ন বোর্ডে যেমনটা নির্বাচিত হত তেমন। অন্যরা, অপেক্ষাকৃত উত্তম এবং অধিক শিক্ষিত। ৩ শতাংশেরও কম নির্বাচিত প্রতিনিধি অশিক্ষিত। অন্যদের মধ্যে অধিকাংশই আণ্ডার মেট্রিকুলেট এবং কিছু উচ্চ শিক্ষিত।

 

সবচেয়ে বড় গ্রুপটা কৃষিবিদদের। তাদের পরেই আছে ছোটখাট ব্যবসা বাণিজ্যের লোকজন। অতীতে এই ধরনের লোক খুব কমই নির্বাচিত হত।

 

খুব অল্প সংখ্যক আইনের এবং অন্য পেশার লোক নির্বাচিত হয়েছেন, বিশেষত, শহর এলাকায়।

 

সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, ইউনিয়ন বোর্ডে যেমনটা নির্বাচিত হত এবার ইউনিয়ন কাউন্সিলে নির্বাচিতরা অধিক যোগ্য। ঢাকার ইউনিয়ন কাউন্সিলে নির্বাচিত কিছু প্রার্থী অতি উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন; একজন রিটায়ার্ড ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, একজন রিটায়ার্ড মেডিকেল কলেজ প্রিন্সিপাল, এবং একজন রিটায়ার্ড জাজ।

 

যাহোক, ইউনিয়ন কমিটির লোকজন কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আগের মিউনিসিপ্যালিটির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের চেয়ে নিম্নমানের। এর কারন হচ্ছে, ইউনিয়ন কমিটির কাজ এবং ক্ষমতা কার্যত নেই বললেই চলে, এবং যেটুকু আছে তা অতি ঝাপসা এবং অস্পষ্ট। একমাত্র আকর্ষণ হচ্ছে, ইউনিয়ন কমিটির সদস্যদের মধ্যে মাত্র একজন চেয়ারম্যান হবেন এবং তিনি মিউনিসিপ্যাল বোর্ডের এক্স অফিসিও সদস্য হবেন।

পৌরসভার সদস্য।  এই চেয়ারম্যান নির্বাচনে গড়পড়তায় দশজনের মধ্যে একজনের প্রত্যাশা ছিল, যদিও অনেকেই এই কমিটিতে প্রতিযোগীতার আগ্রহই বোধ করেনি।

 

সিলেট এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে আগে যেখানে ১১০টি ইউনিয়ন বোর্ড ছিল, সেখানের সাধারণ প্রবণতা ছিল গ্রাম প্রধান ও মোড়লদের উপেক্ষা করা। প্রত্যাশার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয়দের আনুগত্য অতিক্রম করার মতো উপজাতিয়দের বন্ধন তেমন দৃঢ় ছিলনা। মোড়ল ও নেতাদের প্রভাব কমে যাওয়াটা লক্ষ্য করার মতো ছিল।

 

(গোপনীয়)

 

পাকিস্তানে প্রাথমিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনে তথ্য প্রকাশের জন্য প্রশ্নসমূহের উত্তর-রেফা. লেটার নং- ৫০-১৯(৫)/৫৯-রেস.( -Ref. letter No. 50-19(5)/59-Res.), ১লা জানুয়ারী, ১৯৬০ তারিখে ব্যুরো অফ ন্যাশনাল রিকন্সট্রাকশন, করাচি হতে ব্যুরো অফ ন্যাশনাল রিকন্সট্রাকশন, ঢাকা’কে।

 

১। জেলাসমূহের নামঃ                                             পূর্ব পাকিস্তানের সকল ১৭টি জেলা।

২। জাতীয় সংসদের আসনবিন্যাস এবং মনোনয়নঃ

ক) মোট আসন সংখ্যাঃ                                            ৪০,০০০টি

খ) জেলাসমূহের দাখিল করা

মোট মনোনয়নপত্রের মোট সংখ্যাঃ                                ৮৭,১৯০টি

গ) সঙ্গত কারণে জেলাসমূহের

প্রত্যাখ্যাত মনোয়নপত্রের মোট সংখ্যাঃ                            ২,২৭৪টি (মূলত অনিয়ম ও অযোগ্যতার জন্য বাতিল)

ঘ) জেলাসমূহে প্রতিযোগীতায় থাকা মোট আসন সংখ্যাঃ           ৩২,৯১৭টি

৩) প্রার্থীঃ

ক) গড় বয়সঃ                                                     ৩৫ হতে ৪০ এর মধ্যে

খ) শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ                                             মাধ্যমিক এবং আরো উচ্চতর   ৪,২৯৮ জন

নিম্ন মাধ্যমিক                  ৩৪,৮১৪ জন

অশিক্ষিত                           ৮৮৮ জন

গ) পেশাগত ও আর্থিক অবস্থাঃ                                    মুলতঃ কৃষিবিদ ও ব্যবসায়ী আর সাথে অবসরপ্রাপ্ত

গুটিকয়েক সরকারী কর্মচারী। প্রাক্তন চাকুরীজীবী এবং

বৈধভাবে চিকিৎসার সাথে জড়িত। নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে শিক্ষিত শতাংশের উচ্চহারের সূচক দেখায় কৃষিবিদ; যারা ফিরে মূলতঃ মধ্যবিত্ত কৃষিজীবি পরিবার থেকে।

 

কৃষিবিদ-                             ৩২,৯৮৬ জন

ব্যবসায়ী-                      ৫,৮১০ জন

ঠিকাদার-                         ৪৩৪ জন

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি-             ২৫৭ জন

আইনজীবি-                                ২৯৮ জন

প্রাক্তন চাকুরিজীবি-                        ২১৫ জন

রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট-     ২,৮০০ জন

 

ঘ) সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে

তাদের পূর্বের কার্যক্রমঃ                                           অনুমান করা হয় যে নির্বাচিত সদস্যদের প্রায় ৭.৫ শতাংশ

বিপ্লবের আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কিছু

সংশ্লিষ্টতা ছিল; প্রায় ৪০ শতাংশ সদস্যরা নির্বাচিত হয় যারা

পুরনো ইউনিয়ন বোর্ডে নির্বাচিত হওয়ায় অভ্যস্ত ছিল। তাদের অধিংকাশই গ্রামাঞ্চলের সামাজিক বা অন্যান্য কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল।

 

ঙ) নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা যে পদ্ধতি অবলম্বন করেঃ          নিজেদের সামাজিক কার্যক্রম এবং প্রচারণা ও উল্লেখযোগ্য

বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে প্রতিটি ভোটারের দরজায় ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিতি।

যদিও প্রার্থীদের দ্বারা ভোটভিক্ষার জন্য কিছু জায়গায় জনসভা আয়োজিত হয়, মোটের উপর ভোটারদের দ্বারে দ্বারে তদবির করা পর্যন্তই ছিল  প্রার্থী ও সমর্থকেরা সীমাবদ্ধ।

 

চ) নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীরা তাদের কি ধরনের

আহ্বান তৈরি করেছিল?                                           ব্যক্তিগত আহ্বানের ভিত্তিতে ভোটারদের জনসেবা

প্রদান করা, ন্যায়পরায়ণতা এবং পরিষেবার জন্য স্বক্ষমতা,

যা প্রার্থীর নিজেদের জন্যে বলে দাবী করেছে।

 

ছ) তারা কি কোন প্রকার কর্মসূচীকে

সামনে রেখেছিল?                                                 না। দলগুলির নিষেধাজ্ঞা জারি সহ, কর্মসূচী ভিত্তিক নির্বাচন খুব

সম্ভবত অপ্রাসঙ্গিক ছিল।

 

জ) তারা কি ভোটারদের আস্থার যোগ্যতায় নিজেদের

স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পূর্ণরূপে জানিয়েছিল?                       হ্যাঁ, আহ্বান বেশীরভাগই স্বতন্ত্র ছিল এবং কোন প্রকারের

কর্মসূচীর ঘোষণা ছিলনা। [৩(ছ) কলাম দেখুন]।

 

৪) নির্বাচনে ভোটারদের মনোভাবঃ

 

ক) জনতা কি এগিয়ে এসেছিল, হ্যাঁ। এর জন্য বিভিন্ন কারণ রয়েছে,প্রচুর পরিমান ভোটের দৃষ্টান্ত স্থাপনে? যদি তাই হয়, এর জন্য কোন বিষয়গুলো দায়ী?                        i)ছোট ছোট নির্বাচনী এলাকা এবং ভোটকেন্দ্রগুলো

নৈকট্যতা

  1. ii) নতুন ইউনিয়ন পরিষদের বৃহত্তর ক্ষমতা এবং বিপুল সংখ্যক জনতার বহুল আকাংখিত ক্ষমতা বণ্টন ও এর ফলাফল

iii) ব্যক্তি নির্বাচনের জন্য শুধুমাত্র এই বিধানগুলিই ছিল বর্তমান, এতে জনতার সহজাত গণতান্ত্রিক আবেগ জোরালো হয়ে ওঠে।

  1. iv) সামাজিক ও পারিবারিক দ্বন্দ্বও প্রতিযোগীতায় উৎসাহী হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
  2. v) রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা নিপীড়নের ভয়ে যে জনগোষ্ঠী সাধারণত নিষ্ক্রিয় ও নিরপেক্ষ থাকতো তারাও বিদ্যমান শান্ত পরিবেশে ভোটাধিকারের চর্চা করতে পারে।
  3. vi) বিপুল সংখ্যক নারী ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে গিয়েছিল নির্বাচনী কেন্দ্রগুলো কাছাকাছি হওয়ায় এবং নারী অবমাননাগুলো নিষ্ক্রিয় করতে।

 

 

খ) এইটি কি রাজনৈতিক সচেতনতার জন্য ছিল?-                 হ্যাঁ।

 

গ) যদি তাই হয়, এই রাজনৈতিক সচেতনতায়

কিসের অবদান ছিল?                                              একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত এই প্রদেশের জনগণ তাদের

রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে কম-বেশী সবাই সচেতন ছিল।

তাদের এই সচেতনতা আরো জেগে উঠে ‘ব্যুরো অফ ন্যাশনাল রিকন্সট্রাকশন’ দ্বারা পরিকল্পিত ও  কার্যকরী প্রচারণা কার্যক্রম চালু রাখার মাধ্যমে যাতে প্রথম ‘মৌলিক গণতান্ত্রিক প্রকল্প’র কর্মকর্তা ও নেতৃস্থানীয়দের অকর্মকর্তাদের সহায়তায় এর গুরুত্ব, ভাবগাম্ভীর্যতা, মর্যাদা ও প্রভাব বিস্তার করে।

 

ঘ) এইটি কি বিভাগীয় বা দলগত অধিকারের জন্য ছিল?-         বিভাগীয় বা দলগত অধিকার নিয়ে তাঁদের নেতারা খুবই সামান্য সুযোগ  দেখেছিল। কিছু গোপন দল তাদের নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে যে কোন স্থানে পৌঁছে দিতে সচেষ্ট ছিল, যদিও তাদের সাফল্য সীমিত ছিল। তাদের অংশগ্রহণ ও সাফল্যের সীমা উপযুক্ত সংস্থার তদন্তাধীন।

 

যতদূর দেখা যায়, অধিংকাশ আসনের প্রতিযোগীতা ছিল

স্বতন্ত্র ধারায় যেখানে বিভাগীয় বা দলগত অধিকারের কোন স্থানই ছিলো না।

 

ঘ) যদি তাই হয়, তবে দলগত বা বিভাগীয়

অধিকারের জন্য কারণগুলো কি কি ছিল?-                         সর্বশেষ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো,

সাথে গোপন দলীয় সংগঠনগুলো শুধুমাত্র দলীয় উদ্দেশ্যে পরিচালিত হওয়ার অবস্থানে ছিল। যে কোন রকমের বিরোধী সংগঠনের প্রতিদ্বন্দ্বী দল বা সাংগঠনিক অনুপস্থিতিতে তারা অনুমান করে নেয় যে তাদের জয়ের সম্ভাবনা আছে। এদের দলীয় স্বার্থ মূলতঃ দলীয় ভাবাদর্শ ও তাৎক্ষনিক উদ্দেশ্যগুলো বিস্তারের ইচ্ছাতেই পরিচালিত হয়। যেমন, নির্বাচন সংক্রান্ত দৃঢ় অবস্থান অর্জন যদি  ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী কলেজগুলোর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সক্রিয় এবং ভবিষ্যত সংবিধানের অধীনে সংসদ সদস্য হয়ে। (রাজনৈতিক প্রভাব অনুচ্ছেদ এবং এই প্রতিবেদনের সাথে সংযুক্ত নোটে ‘সংখ্যালঘুদের ভূমিকা’ দেখা যেতে পারে।)

 

৫) নির্বাচনের জন্য প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনাঃ

 

ক) প্রতিটি কেন্দ্রে গড় কতজন ভোটারদের জন্য

খাদ্যাদি সরবরাহ করা প্রয়োজন ছিল?                             গড়ে ৫৩০ জন।

 

খ) এই উদ্দেশ্যে ব্যবস্থাপনা কি যথোপযুক্ত ছিল?

যদি না হয়ে থাকে, এই সম্পর্কিত ভুল ও দায়ভারঃ                ব্যবস্থাপনা যথোপযুক্ত ছিল, নির্বাচনের আয়োজন সুশৃংখল

ছিল এবং অভিযোগ ও অনুরোধ এসেছে খুবই কম। চারিদিকে সহযোগীতা ও মঙ্গলকামনার সুবাতাস বিদ্যমান ছিল। (প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার অনুচ্ছেদটি এই প্রতিবেদনের সাথে সংযুক্ত নোটে দেখা যেতে পারে।)

 

গ)  ভাল অথবা ভুল ব্যবস্থাপনাগুলো ভোটের

উপর কিরূপ প্রভাব বিস্তার করেছে?                               নিকট অতীতের যেকোন নির্বাচনের চাইতেও তূলনামূলকভাবে

অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যেই  বিশাল পরিমাণ ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়ে যায়। এছাড়াও প্রায় সমস্ত কেন্দ্রের নির্বাচনী ফলাফল সূর্যাস্তের পূর্বেই ঘোষিত হয়।

 

ঘ)  প্রতি নির্বাচনী এলাকার গড় আয়তন কত ছিল?               ১.২৫ বর্গমাইল।

 

ঙ) এইটি কি ছোট নির্বাচনী এলাকা বলেই সম্ভবপর

হয়েছে; যদি তাই হয়, বিদ্যমান ভোটার তালিকা

কিসের ভিত্তিতে?                                                  নির্বাচিত আসনের এলাকা আরো কমিয়ে আনা দুরূহ ছিল।

সর্বত্রই বিদ্যমান ভোটার তালিকাতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অল্পই বহু-সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচনী আসন ছিল কিন্তু একক ভোটের মাধ্যমে আলাদা করা দুস্কর ছিল। যতদূর সম্ভব, বেশির ভাগ নির্বাচনী আসনই একক সদস্যের ছিল।

 

৬) নির্বাচনের ফলাফলঃ                                           (বিস্তারিত হুবহু মুদ্রিত সংযুক্তিতে দেখুন)

 

ক) নির্বাচিত ব্যক্তিদের ধরণ।                                      সাধারণত, যে সকল লোক ইউনিয়ন পরিষদ/কমিটির জন্য

নির্বাচিত হয়েছে তারা হয়তো তাদের গ্রহণযোগ্য চারিত্রিক গুণাবলীর জন্য, কিন্তু এইসব ক্ষেত্রে কিছু লোকও এসেছে যারা আগে থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ ও সন্দেহজনক চরিত্রের।

(এছাড়াও বিস্তারিত জানার জন্য “নির্বাচিত ব্যক্তিদের ধরণ” শিরোনামের অনুচ্ছেদটি অনুগ্রহ করে দেখুন)

 

খ) শিক্ষাগত যোগ্যতা।                                            (৩ নং অনুচ্ছেদটি দেখুন)। নির্বাচিতদের মধ্যে প্রায় ৯৭.৮%

শিক্ষিত। প্রায় ১০.৮% সদস্য মাধ্যমিক বা মাধ্যমিকের চাইতেও উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতার, নির্বাচিত নিরক্ষর সদস্য মাত্র ২.২%।

 

গ) পেশাগত ও আর্থিক অবস্থান।                                  অধিকাংশই মধ্যবিত্ত কৃষিবিদ। অল্প কিছু অবসরপ্রাপ্ত

সরকারী কমর্চারী,  প্রাক্তন চাকুরীজীবি, আইনজীবি, চিকিৎসা পেশাজীবি এবং ব্যবসায়ী। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া নির্বাচিত সদস্যদের প্রায় সবার আর্থিক অবস্থান মধ্য ও নিম্ন-আয়ের দল।

 

ঘ) সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কার্যক্রম।             অধিকাংশই স্থানীয় সমাজকর্মী এবং অল্প সংখ্যক আছে যারা

আগে থেকেই রাজনৈতিক কর্মজীবন আছে।

 

ঙ) সফল প্রার্থী বা প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনের জন্য

পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী।                                            সাধারণ মানুষের সেবার আবেদন/আহ্বান ছাড়া কোন

সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী ছিল না।

 

চ) কতগুলো আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থেকে যায়

এবং আসনগুলোতে প্রতিদ্বন্দিতাহীনতার

কারণগুলো কি কি?                                                বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোট আসন সংখ্যা ছিল ৭,০৮৩টি;

আর কারণগুলো হচ্ছে প্রত্যাখ্যান, মনোনয়ন প্রত্যাহার এবং আপস-রফা।

 

  1. i) এর কারণ কি প্রার্থীর অভিভূতকারী জনপ্রিয়তা? প্রধানত প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও প্রভাব বিস্তার বিনাপ্রতিদ্বন্দিতার

কারণ। কিছু জায়গায় শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি থাকায়

মনোনয়নপত্র বাতিল, কিছু জায়গায় পুরুষদের আর্থিক

সংস্থানের অপ্রাচুর্যতা এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা নির্বাচন

ব্যহত করে।

 

  1. II. এটা কি তাদের প্রতিদ্বন্দতা পূর্ণ নির্বাচনে অনাগ্রহের কারনেই?

-> আগ্রহ কম থাকার কারনে প্রতিদ্বন্ধীতাহীন নির্বাচনের উদাহরন কমই আছে।

III. এটা কি তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের বা পরের কোন কারসাজীর কারনেই?

-> না।

  1. যেসকল আসনে কেউ প্রতিদ্বন্দিতা করার জন্য এগিয়ে আসেনি এবং তার কারণঃ

১৪ বগুড়া জেলার দশটি , রাজশাহী জেলার তিনটি এবং খুলনা জেলার একটি আসনে কেউ প্রতিদ্বন্দিতা করে নি ।বগুড়ার একটি আসনে সাতজন সদস্য নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছিল, যার অধিকাংশই ছিল রেলওয়ে কর্মচারী ও রিফিউজি অর্থাৎ তাদের ভোটাধিকার ছিল না ।আরো একটি আসনে ৩ জন সদস্য নির্বাচিত হয়নি নির্বাচনী সীমানা নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকার কারনে । রাজশাহী জেলার ৩ টি এবং খুলনা জেলার একটি আসনে নির্বাচন না হবার কারন এখনো রিপোর্ট করা হয় নি।

৭। ভোটারদের গড় শতাংশ ও ভোট গণনার হার ঃ

  1. a) প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় গড় ভোট – ৫৩০ টি ।

b)ভোট গণনা হয়েছে – সর্বমোট- ১১৭৯০৯২৭ টি

পুরুষ – ৭৬৫৮৮৮১ টি

মহিলা – ৪১৩২০৪৬ টি

c)তুলনামূলক ভোট পরিসংখ্যান ( পুরুষ / মহিলা )আগের পৌরসভা /গণপরিষদ নির্বাচন অনুযায়ী

ঃ পুরুষ ৫০ শতাংশ

মহিলা ২০ শতাংশ

g)সব জেলায় ভোট গ্ণনার শতাংশ ( মৌলিক গণতন্ত্র ) –                                     পুরুষ -৬৭ শতাংশ

মহিলা – ৪২ শতাংশ (গড়ে)

৮। অন্য কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ উল্ল্রখ করতে চায় ঃ ভোটারদের একটি বড় সংখ্যা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে উপস্থিত ছিলেন । শান্তি ও শৃঙ্খলার সাথে ভোট প্রদান করেছেন এবং কোথাও বাহ্যিক ঘটনার জন্য অনুযোগ আসেনি। যদিও মাঝে উপর মহল থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ঘন ঘন মত পরিবর্তন করার কারনে মাঝে মাঝে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।