6

বাংলাদেশ পত্রিকার ১৯৭১ সালের ২২ ডিসেম্বরের প্রতিবেদনঃ দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ

শিরোনাম সংবাদপত্র তারিখ
দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ বাংলাদেশ ভলিউম ১ নং ২৬ ২২ ডিসেম্বর, ১৯৭১

দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পন

ঢাকা স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী

স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পতপত করে উড়ছে। ১৬ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর কাছে দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আট মাসব্যাপী বাংলাদেশের মানুষের ওপর চলা অত্যাচার ও শোষণের পালা শেষ হল এবং শুরু হল শান্তি ও উন্নয়নের দিন। দেশের স্বাধীনটার জন্য জীবন দেয়া লক্ষ লক্ষ শহীদের নাম ইতিহাসের সোনালি পাতাই রক্তাক্ষরে লেখা থাকবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান-এর স্বপ্ন আজ বাস্তবায়িত হল।

 

ভারতীয় বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্র বাহিনীর নিকট পরাজিত হয়ে ১৬ ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ৭ মার্চ যে স্থানে বিশাল জনসমাবেশে জাতির জনক দেশকে স্বাধীন করার শপথ নিয়েছিলেন, সেই ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে দখলদার বাহিনীর প্রধান লেফটেনেন্ট জেনারেল এ কে খান নিয়াজী আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন, যা গৃহীত হয় মিত্র বাহিনীর লেফটেনেন্ট জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরা কর্তৃক।

 

ঝড়ের মুখে আগুনের মত আত্মসমর্পণের খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্রই জনগণ বাড়ী থেকে বেরিয়ে এসে আনন্দ প্রকাশ করে। আত্মসমর্পণের স্থান রেসকোর্সে ছড়িয়ে পড়ে বুনো উল্লাস। ‘জয় বাংলা’, ‘শেখ মুজিব জিন্দাবাদ’, ‘মুজিব, ইন্দিরা জিন্দাবাদ’ প্রভৃতি ধ্বনিতে তীব্রভাবে মুখরিত হতে থাকে রেসকোর্স ময়দান।

 

স্বাধীনতা এসেছে  কিন্তু আমাদের সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্র- ঘোষিত এই তিন মুলনীতির উপর ভিত্তি করে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের সংগ্রাম ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

 

শোষণ-নিপীড়ন অবসানের জন্য বাংলাদেশের নেতারা এক নতুন সামাজিক-অর্থনৈতিক কাঠামোর প্রত্যয় ব্যাক্ত করেছেন। সেই সাথে তাঁরা জনগণকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাভাজন হওয়ার এবং আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার অনুরোধ করেছেন। তাঁরা বলেন, সামরিক শাসকের সহচরদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জন্য অতিশীঘ্র একটি বিচারসভা প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেইসাথে শীঘ্রই জনগণের জন্য নিজেদের সংবিধান প্রণীত হবে।

 

ঢাকার বেসামরিক প্রশাসন ইতিমধ্যে কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। অন্যান্য স্থানের মত ঢাকাতেও জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জীবনচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট খেত্রের কর্মকর্তা এবং জনগণ দিনভর কাজ করে যাচ্ছে।