শিরোনাম | উৎস | তারিখ |
৮ নং সেক্টর কমান্ডারের একটি গোপন চিঠি | ৮ নং সেক্টরের দলিলপত্র | ৩ নভেম্বর, ১৯৭১ |
গোপনীয়
জরুরী
হেডকোয়ার্টার বি সেক্টর
বাংলাদেশ বাহিনী
জে এস 1-সি / ১০৫ / সি
০৩ নভেম্বর ৭১
প্রতি
হেডকোয়ার্টার
বাংলাদেশ ফোর্স
সি সেক্টর
২ করপ্স
বিষয় – পাক স্পেশাল গেরিলা
সম্প্রতি ৬ জন বিশেষ পাকগেরিলা ৪ নং এস বি ইউ সেক্টর এর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তারা চারঘাট এস কিউ ৬১৯২ এম / এস ৭৮ ডি / ১৫ দিয়ে প্রবেশ করেছিল। এই কর্মীদের বিশেষকরে আন্তর্জাতিক সীমানা জুড়ে এবং মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে দুই মাস অন্তর্ঘাত মিশনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে নির্বাচিত ব্যক্তিগণ বেশিরভাগ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা অভিবাসী যাদের সম্পর্ক এখনো ভারতের সাথে ছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের কাছে সহজেই আশ্রয় পেত। এই ধরণের প্রশিক্ষণ সীমান্তের সবদিকেই আয়োজন করা হয়েছিল।
২। রাজশাহী জেলা
ক) একটি ১৩৮ ব্যক্তির দল হর্টিকালচার রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল।
দুই মাসের জন্য রাজশাহীতে তারা এই প্রশিক্ষণ নেয়। তারা সবাই বাঙালি।
খ. তদের নিম্নে উল্লেখিত জিনিস দিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে: –
(১) CaptSSG – ১
(২) এন / সাব এস এস জি -১
(৩) এক হাবিলদার এস এস জি -১
(৪) এন কে এস এস জি – ২
(৫) শিবির টি পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ইলিয়াস নামের এক অধিনায়ক দেখাশোনা করে থাকেন। এটি রাজশাহীতে অবস্থিত।
গ. গেরিলাদের তিনটি গ্রুপ ছিল – যদিও তাদের মধ্যে সামান্য পার্থক্য ছিল।
(১) সারদা গ্রুপ – ২১ জন
(২) প্রেমতলী ও গোদাগাড়ী – ২৮ জন
(৩) শিবগঞ্জ – ৩০ জন
ঘ. এরা বিস্ফোরক, মাইন, সব অস্ত্র এবং সি কিউ বি অস্ত্রের উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
৩. নিচের মিশন তাদের দেওয়া হল: –
(১) রেইড করা – মুক্তিফৌজ এবং বিএসএফ শিবিরে
(২) সেতু ও কালভার্ট ধ্বংস করা
(৩) টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ লাইন কাটা
যেসব অস্ত্র ও বিস্ফোরক তাদের কাছে ছিল তা হল-
এ টি কে মাইন – ২ টি
এ পি মাইন – ২ টি
গ্রেনেড – ২ টি
তার কাটার – ১ টি
ভারতীয় ও পাকিস্তানি রুপি – ২০ রুপি – যা পাকবাহিনী কর্তৃক প্রদত্ত।
৪। রাজশাহীতে নিচের ক্যাম্পগুলো বরাদ্দ আছে
ক) রাজাকারদের জন্য – রাজশাহী উপশহর
খ) আলবদরদের জন্য – রাজশাহী স্টেডিয়াম
গ) মুজাহিদের জন্য – রাজশাহী বাড়াল কুটি
৫। এদেরকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের ৬ জন পাক স্পেশাল গেরিলা বলেছে তাদের পুরো দল আত্মসমর্পনের জন্য প্রস্তুত আছে।
স্বাঃ / -এম এ মনজুর
কমান্ডো
বি সেক্টর
বাংলাদেশ বাহিনী।
গোপনীয়
——————————————
বাংলার মুক্তিযুদ্ধ
(গেরিলা বাহিনীর নির্দেশাবলী)
“এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
-বংগবন্ধু
প্রনীত-
সেনানায়ক
দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী
একটি সংগ্রামী ফরিয়াদ
ভায়েরা
আজ আমরা আমাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত। পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক গোষ্ঠী ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ থেকে যে নৃশংসভাবে নির্বিচারে বাঙালী হত্যা করেছে, আমাদের মা বোনকে ধর্ষণ করেছে ও আমাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে সম্পদ লুটে আমাদেরকে গৃহহারা করেছে তার বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি। আমাদের যুদ্ধ ততদিন চলবে যতদিন পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী সমূলে নিপাক না হবে এবং বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন না হবে। শত্রু নির্মুল করার জন্য শত্রুকে জানা দরকার ও তার রণকৌশল সম্বন্ধে জ্ঞ্যান থাকা নিতান্ত প্রয়োজন। আমাদের শত্রু সুসজ্জিত ও সংখ্যায় অধিক। তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের সময় এখনো হয়নি। আমরা এখনো গেরিলা রণকৌশল ব্যাবহার করছি। অতর্কিতে শত্রুর উপর হামলা করে তাই সর্বাধিক ক্ষতি সাধন করতে হবে। দেখতে হবে শত্রু যেন তার দৈনিক সরবরাহ না পায় ও কোথাও নিরাপদ অনুভব না করতে পারে।
আমি বিশ্বাস করি যে মুক্তিযুদ্ধের যে নির্দেশাবলী এই লিপিকায় দেওয়া হয়েছে তা পুরাপুরিভাবে পালন করলে আমরা সফলকাম হবো।
খোদা মোদের সহায় হন-জয় আমাদের সুনিশ্চিত। জয় বাংলা।
এম, এ, মঞ্জুর
সেনানায়ক
আমরা বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী
আমাদের কাম্যঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা
আমাদের শত্রুঃ বিবেকহীন পশ্চিম পাকিস্তানী সরকার ও বর্বর হানাদার সেনারা, যারা-
* শিশু নারী বৃদ্ধ নির্বিচারে বাঙালীদেরকে হত্যা করেছে।
* ঘৃণ্যতম উপায়ে আমাদের মা বোনদের ইজ্জত নষ্ট করেছে।
* আমাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে।
* আমাদের সম্পদ লুট করে লক্ষ লক্ষ নিরাপরাদ নরনারীকে দেশছাড়া করেছে।
* বাঙ্গালী জাতীকে ধ্বংস করার জন্য আমাদের মাঝে ভাঙ্গন ধরাবার চেষ্টা করেছে।
আমাদের পণঃ খোদার উপর বিশ্বাস রেখে মরণপণ সংগ্রাম অক্ষুণ্ণ রাখবো, যতক্ষণ না আমাদের শেষ শত্রুটিকে দেশ ছাড়া করতে পারি এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।
মুক্তিবাহিনীর নির্দেশাবলী
গেরিলা যুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়
১। প্রথম পর্যায়- ঘাঁটি স্থাপন – (১০-১৫ দিন মোটামুটি সময়)
(ক) ঘাঁটি ও লুকাইবার বিভিন্ন স্থান নির্বাচন।
(খ) অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ এবং অন্যান্য রসদ রাখার গুপ্তস্থান নির্বাচন।
(গ) কর্মরত গণবাহিনীর লোকদের সহিত যোগাযোগ স্থাপন।
(ঘ) স্বাধীনতাকামী স্থানীয় দলের সহিত যোগাযোগ।
(ঙ) স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সহিত যোগাযোগ স্থাপন করে তাহাদের মন জয়।
(চ) শত্রু ও স্থানীয় বিরুদ্ধতাকারী দলগুলির সম্বন্ধে খবরাখবর সংগ্রহ।
(ছ) গোপন তথ্য সরবরাহকারী সংস্থা (ইনটেলিজেন্স নেটওয়ার্ক) স্থাপন ও খবর আদান প্রদানের ব্যাবস্থা। এই কাজ সব পর্যায়ে চলবে।
২। দ্বিতীয় পর্যায়ঃ অসামরিক জনগণের সমর্থন আদায়-
(এ কাজে কোন নির্দিষ্ট সময় নেই, তৃতীয় পর্যায় অবধি চলবে।)
(ক) জনগণের মনে রাজনৈতিক চেতনা সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সমাজকল্যাণমুলক কাজ করে জনগণের মন জয় করতে হবে। সমাজকল্যাণমূলক কাজের মধ্যে রয়েছে – আর্তের চিকিৎসা, ত্রাণকার্য ও চুরি ডাকাতি বন্ধ।
(খ) রাজাকার, মুজাহিদ ও অন্যান্য যারা বিভিন্ন কারণে শত্রুর সহযোগিতা করছে তাদের মধ্যে ভাঙন ধরাতে হবে ও নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নিতে হবে।
(গ) ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও হত্যাকান্ড এই সমস্ত ঘৃণ্য অসামাজিক কাজকে সমূলে উচ্ছেদ করতে হবে।
(ঘ) গ্রামের বা অঞ্চলের আঞ্চলিক রক্ষীবাহিনী গঠন করতে হবে।
৩। তৃতীয় পর্যায়ঃ সম্পূর্ণভাবে জয়লাভ না হওয়া পর্যন্ত শত্রুদের ধ্বংস সাধন করা।
(ক) রেলপথ, সড়ক এবং নদীপথে শত্রুর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা।
(খ) সকল বিমান যোগাযোগব্যাবস্থা বিনিষ্ট করা ও শত্রুদের ব্যাবহারের অনুপযোগী করা।
(গ) বিদ্যুৎ সরবরাহ নষ্ট করে দেওয়া।
(ঘ) শত্রুর সরকারি অফিস আদালত অকেজো করে দেওয়া।
(ঙ) শত্রুদ্বারা নির্বাচিত অনুষ্ঠানকে বিফল করা।
(চ) সকল জ্বালানি তেলের গুদাম বিনিষ্ট করা।
(ছ) আঞ্চলিক প্রশাসন ব্যাবস্থা প্রণয়ন। এ কাজে সকল সৎ ও কর্তব্যপরায়ণ মোড়ল-মাতব্বরদের যোগ্য স্থান দিতে হবে এবং প্রয়োজনবোধে নতুন লোক নিয়োগ করতে হবে।
(জ) পাট রপ্তানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। সরকারী গুদাম ও বড় বড় ব্যাবসায়ীদের (ইস্পাহানী ও আদমজী) গুদাম, যেখান থেকে পাট বিদেশে রপ্তানী করা হয় সেগুলো সম্পূর্ণভাবে ধব্বংস করতে হবে। দেশবাসীকে পাট না বুনে ধান বুনার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।
গোরিলা যুদ্ধের রীতি ও কৌশল
শত্রুকে চমকে দেওয়া ও প্রতারণা করা- গেরিলার জন্য সবচে বড় অস্ত্র কৌশল- শত্রুকে হঠাৎ চমকে দেওয়া। শত্রু অধিকৃত এলাকায় সল্প সংখ্যক লোকবল ও অস্ত্রবল নিয়ে কাজ করতে হয়, সুতরাং শত্রুকে আচমকা আঘাত না হানলে শত্রু প্রস্তুতি নিয়ে উল্টো আঘাত হেনে অবাঞ্জিত পরিমাণ ক্ষতিসাধন করতে পারে। অতএব এ ধরনের চমক দেওয়ার জন্য গেরিলারা নিম্নলিখিত উপায়ে কাজ করবেঃ-
(ক) শত্রু যেখানে তোমাদের আঘাতের আশংকা আশা করে না সেখান থেকে আঘাত করো।
(খ) একই স্থানে বারবার আক্রমণ করবে না, এতে শত্রু সাবধান হয়ে আটঘাট বেঁধে আঘাত প্রতিহত করবে।
(গ) রাত্রের অন্ধকারে কাজ করবে।
(ঘ) তোমার কাজের ধরণ নিয়মিত পদ্ধতিতে হবে না, ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন করবে।
(ঙ) কঠিন সাবধানতা অবলম্বন করবে।
২। সাবধানতা – বেঁচে থাকা গেরিলাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এমন কোন কাজ করবে না যাতে তোমার অস্তিত্বের আশংকা দেখা দেয়। সর্বক্ষণ জাগ্রত দৃষ্টি রাখবে যাতে শত্রু তোমাকে আচমকা আঘাত না করতে পারে।
৩। গতিশীলতা – নিয়মিত যুদ্ধে সৈনিকের যেসব যানবাহনের সুযোগ থাকে, গেরিলাদের তা থাকে না। এই জন্য গেরিলা তৎপরতা এমন সব স্থানে করতে হবে যেখানে নিয়মিত সৈনিকরা আধুনিক যানবাহন নিয়ে আসতে না পারে।
গেরিলাদের গতিশীলতার প্রয়োজনঃ-
(ক) ধাঁধাঁর জন্য।
(খ) চমকে দেওয়ার জন্য।
গাতিশীলতার জন্য গেরিলাঃ
(গ) শারীরিকভাবে হালকা হবে।
(ঘ) বাহ্যিক ও মানসিক দিক থেকে দৃঢ় হবে।
(ঙ) চিন্তাশীল ও ভালো পরিকল্পনাবিদ হবে।
৪। আক্রমণ- গেরিলাই সর্বদা আক্রমণে উদ্যোগী হবে। যদি কোথাও শত্রু আক্রমণ করে তবে যথাসম্ভব সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে হবে।
চেতনা- গেরিলার চেতনা ও উদ্যম সর্বোচ্চস্তরের হওয়া চাই। তাদের মনোভাব এমন হবে যে, তারা সবাই একই পরিবারের লোক। একই আদর্শ বা কারণের জন্য যুদ্ধরত। সাথীকে বিপদে ফেলে গেরিলা কখনো পালায় না।
নিয়মানুবর্তিতা- গেরিলার শৃঙ্খলা সর্বোচ্চস্তরের হবে। নিজের জীবণ বিপন্ন করেও গেরিলা তার দলপতির নির্দেশ মানে।
মুক্তিবাহিনী কি করবে ও কি করবে না–
কি করবেঃ
(ক) সর্বদা শত্রুর খবরাখবর সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে।
(খ) শত্রুর চর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে, তাদের সম্বন্ধে সজাগ থাকতে হবে।
(গ) পর্যবেক্ষণ পোস্ট, পেট্রোল, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি সতর্কতামূলক ব্যাবস্থা গ্রহণ করে প্রয়োজনমত ঘাঁটিকে রক্ষা করতে হবে।
(ঘ) শত্রু যেখানে দুর্বল সেখানে সকল শক্তি একত্রিত করে আঘাত হানতে হবে। শত্রু অধিক শক্তিশালী হলে সরে আসতে হবে।
(ঙ) গেরিলাকে সর্বদা চলমান থাকতে হবে- কোন অপারেশন শেষে তৎক্ষণাৎ সরে আসতে হবে।
(চ) গেরিলা তৎপরতা জবাব হিসাবে শত্রুর যে কোন ধ্বংসাত্মক আক্রমণ থেকে গ্রামকে বাঁচাতে হবে।
(ছ) নারীদের প্রতি গেরিলারা সম্মান প্রদর্শন করবে এবং শিশুদের স্নেহ করবে। বিপদে উভয়কে বাঁচাবে।
(জ) মুক্তিবাহিনীর সততা, ন্যায় বিচার এবং একানিষ্ঠতার উদাহরণ জনগণের সামনে প্রদান করতে হবে।
২। কি করবো নাঃ
(ক) বাছ বিচার ছাড়া বেসামরিক হত্যাকান্ডে লিপ্ত হবে না।
(খ) গৃহ বিবাদে লিপ্ত হবে না ও অতীতের গৃহ বিবাদের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য অস্ত্র ব্যাবহার করবে না।
(গ) মুক্তিবাহিনী লুটতরাজ, হত্যাকান্ড, ধর্ষণ বা অর্থ সংগ্রহের মত অন্যায় কার্যে কখনোই লিপ্ত হবে না- এর শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
(ঘ) কোন অপারেশনের লুটের মাল ছোঁবে না। কোন সরকারী গুদাম ইত্যাদি দখল করা হলে স্থানীয় লোকদের মধ্যে গুদামজাত মাল যাতে বিতরন হয় তা দেখবে- নিজেরা জড়িয়ে পড়বে না। কোন শত্রুর চর নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীরা তার সম্পত্তির মালিকানা পাবে।
(ঙ) অপারেশনের পরিকল্পনা শুধু যার জন্য প্রয়োজন সে ছাড়া অন্য কারো সংগে আলোচনা করবে না।
(চ) একই জায়গায় স্থিতিশীল হবে না- সর্বদা চলমান না থাকলে সেটা আত্নঘাতী হবে।
মুক্তিবাহিনীর দলপতি হিসেবে নিম্নলিখিত কর্তব্যগুলো অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে-
১। পুলিশ বিভাগসহ পাকিস্তানের সকল প্রশাসন যন্ত্রকে বিকল করা।
২। পাক সেনা রাজাকার ও পুলিশ বাহিনীর অত্যাচার থেকে বেসামরিক জনসাধারণের নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করা।
৩। দুর্ভিক্ষকালীন সময় বেসামরিক জনগণকে খাদ্য সরবরাহ করা।
৪। যথাসাধ্য আর্তের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা।
৫। শিশুদের বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণসহ সকল স্তরের মানুষকে তার নিজের পেশাগত কার্যে ব্যাস্ত রাখতে হবে- যেমন কর্মকার, ছোট ছোট ব্যাবসায়ী ও চাষী প্রত্যেকেই তার নিজের কাজে ব্যাস্ত থাকবে।
৬। মুক্তিবাহিনী সদস্যদের মধ্যে একতা, শৃঙ্খলা ও আমাদের মহৎ উদ্দেশ্যের প্রতি অটুট বিশ্বাস যাতে অবিচল থাকে তার খেয়াল রাখতে হবে।
শপথনামা –
আমি এতদ্বারা আল্লাহ্/ভগবানকে সাক্ষী রাখিয়া প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করিতে আমি প্রস্তুত। আমি আরও অঙ্গীকার করিতেছি যেঃ-
(ক) সর্বদা বাংলাদেশের জনসাধারণের প্রতি আইনতঃ সরকারের প্রতি ও মুক্তিবাহিনীর প্রতি অনুগত থাকিব।
(খ) নিজের জীবন বিপন্ন করিয়া ও সকলভাবে বাংলাদেশের জনসাধারণের কল্যাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করিব।
(গ) আমাদের প্রধান শত্রু পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ধব্বংস সাধনে লিপ্ত থাকিব।
(ঘ) কোন লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ বা অন্য কোন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হইবো না। কোন লুটের মাল ছোঁব না।
(ঙ) নারী ও শিশুদের প্রতি কোন অশোভন কাজ করিব না।
(চ) মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ না করিলে কোন বাঙালীকে হত্যা করিতে কাহাকেও সাহায্য করিব না।