12

ভারত-সোভিয়েত বিশ বছর মেয়াদী ‘শান্তি, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা’ চুক্তির বিবরণ

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্বাক্ষরিত ২০ বৎসর মেয়াদি শান্তি, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির বিস্তারিত বিবরণ ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণাল­য় ৯ আগস্ট, ১৯৭১

 

শান্তি, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর, আগস্ট ৯

 

 

আন্তরিক বন্ধুত্বের তাগিদে বিদ্যমান সম্পর্ক সুদৃঢ় করার অভিলাষ।

 

একথা বিশ্বাস করা যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার উন্নয়নের ফলে উভয়ের মৌলিক জাতীয় স্বার্থ ও সেইসাথে এশিয়া ও বিশ্ব শান্তির স্বার্থ পূরণে ভূমিকা রাখবে।

 

সর্বজনীন শান্তি ও নিরাপত্তা উন্নীত করনের জন্য এবং আন্তর্জাতিক উত্তেজনা ও উপনিবেশবাদের অবশিষ্টাংশ চূড়ান্ত বর্জন করার প্রচেষ্টা করতে হবে।

 

শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে একত্রে থাকতে হবে।

 

দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে যে বর্তমান বিশ্বের আন্তর্জাতিক সমস্যা শুধুমাত্র দ্বন্দ্ব দ্বারা সমাধান করা যাবেনা।

 

জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও চার্টার মূলনীতি মেনে চলতে সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

 

একদিকে ভারতের প্রজাতন্ত্র এবং অন্য দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন এই চুক্তির ব্যাপারে একমত হন এবং এটি সম্পন্ন করতে নিম্নলিখিত রাষ্ট্রদূতরা  নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

 

ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পক্ষে:

সরদার শরণ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী

 

 

সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে:

জনাব এ গ্রমিকো, পররাষ্ট্র মন্ত্রী, তাদের প্রতিটি সম্ভবনা আলোচনা করেন যা সঠিকভাবে ক্রমান্বয়ে নিম্নে লিপিবদ্ধ হল।

 

ধারা ১: চুক্তিবদ্ধ শপথে ঘোষণা করা হয় যে উভয় দেশের শান্তি ও বন্ধুত্ব দেশের এবং দেশের জনগণের মধ্যে প্রাধান্য পাইবে। উভয় দেশ স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অপরপক্ষের অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকবে। দেশ দুটির আন্তরিক বন্ধুত্ব বজায় থাকবে এবং তারা ভালো

 

প্রতিবেশীসুলভ মন নিয়ে কাজ করবে এবং ব্যাপক সহযোগিতার পূর্বোক্ত নীতির ভিত্তিতে ও সেইসাথে সমতা ও পারস্পরিক সুবিধার জন্য বিদ্যমান সম্পর্ক সংহত করা চালিয়ে যাবে।

 

ধারা ২: প্রত্যেক সম্ভাব্য উপায়ে শান্তি এবং তাদের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উচ্চ চুক্তিবদ্ধ দল সংরক্ষণ এবং এশিয়া ও বিশ্বের সর্বত্র শান্তি জোরদার করার জন্য কাজ করা। অস্ত্র, জাতি এবং সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ অর্জন করার জন্য একসাথে কাজ করা যা এশিয়া সহ সারা বিশ্বে অবস্থান দৃঢ় করবে।

 

ধারা ৩: সাম্য ও আদর্শের প্রতি আনুগত্য পূর্বক ঔপনিবেশিকতা ও বর্ণবাদ সম্পূর্ণ বর্জনের জন্য সংগ্রাম করতে তারা সংকল্পবদ্ধ হন।

 

উচ্চ চুক্তিবদ্ধ দল এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য অন্য দেশকে সহায়তা করতে পারে যাতে যাতে এবং উপনিবেশবাদ ও জাতিগত আধিপত্যের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রামে জাতির আকাঙ্খার সমর্থন করার অন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করবে।

 

ধারা ৪: ভারত সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের শান্তিকামী নীতিকে সন্মান করে। এতে সকল দেশের প্রতি বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাপূর্ন সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।

 

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতীয়দের উদারনীতিকে সম্মান করে এবং মনে করে যে এই নীতি বিশ্বশান্তি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিশ্বের উত্তেজনা কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে।

 

ধারা ৫: সর্বজনীন শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাপারে তারা আগ্রহ প্রকাশ করেন। চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো এই চুক্তিবদ্ধ হয় যে আন্তর্জাতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সমস্যায় একে অপরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখবে এবং তাদের নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে মতবিনিময়, মিটিং, সরকারি প্রতিনিধি এবং দুই সরকারের বিশেষ দূতদের ভিজিট এবং কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করবে।

 

ধারা ৬: তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার তাত্পর্যপূর্ণ সংযুক্ত এবং প্রসারিত করবে। ব্যাপক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রসারিত তাদের মধ্যে বাণিজ্য, পরিবহন ও যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে। এসকল চুক্তি হবে ডিসেম্বর-২৬, ১৯৭০ এর ইন্দো-সোভিয়েত ট্রেড এগ্রিমেন্ট এর ভিত্তিতে।

 

ধারা ৭: বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, প্রেস, রেডিও টেলিভিশন, সিনেমা, পর্যটন ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরও উন্নত করা হবে।

 

ধারা ৮: চুক্তি ঘোষণা করে যে একপক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে পরিচালিত কোন সামরিক জোটে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

 

একে অন্যের বিরুদ্ধে আগ্রাসন থেকে বিরত থাকবে এবং অন্যদের সেনাবাহিনীর ক্ষতিসাধন হয় বা সম্পদ নষ্ট হয় এমন কোন আগ্রাসন অন্যের ভূখণ্ডে চালানো যাবেনা।

 

ধারা ৯: তৃতীয় পক্ষের কেউ যদি অন্যের ক্ষতিসাধনের জন্য কোন চুক্তি করতে চায় তাহলে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। এমন অবস্থায় অবিলম্বে এই দুই দেশ হুমকি অপসারণ করার জন্য পারস্পরিক আলোচনা শুরু করিবে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 

ধারা ১০: তারা শপথ ঘোষণা করে যে একে অন্যের গোপন এক বা একাধিক তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকবে বা কোন চুক্তি যা বর্তমান চুক্তিবিরোধী হয় সেগুলো বর্জন করবে। তারা আরও ঘোষণা করে যে কোন বাধ্যবাধকতা ছাড়াই তারা একে অপরের সামরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে এমন কিছুতে জড়াবেনা।

 

ধারা ১১: এই চুক্তি বিশ বছরের জন্য গৃহীত হল এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরও ৫ বছর চলতে থাকবে যদি এর  মাঝে কোন উচ্চ পর্যায়ের পরিবর্তনের প্রয়োজন না হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের এক মাসের মধ্যে মস্কো থেকে এটি সঞ্চালিত হবে ও বলবত্ থাকবে।

 

ধারা ১২: চুক্তিতে কোন বোঝার ভুল থাকলে উভয় টিম শান্তিপূর্ন আলোচনা করে তা স্পষ্ট করবে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমঝোতার মনোভাব নিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে দ্বিপক্ষীয়ভাবে তা করা হবে।

 

রাষ্ট্রদূতরা হিন্দি, রাশিয়ান এবং ইংরেজিতে উপস্থিত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং সব গুলো সমানভাবে অর্থপূর্ন করা হয়েছে এবং তাদের সিল- স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

 

নয়া দিল্লিতে ৯ অগাস্ট, ১৯৭১ এটি সম্পন্ন হয়।

 

ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং স্বাক্ষর করেন।

 

সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ গ্রমিকো সই করেন।