13

ভেনেজুয়েলার শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের আবেদন

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের জনগণের সাহায্যার্থে ভেনেজুয়েলার শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের আবেদন বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ১৪ জুলাই, ১৯৭১

 

পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের দুর্দশা বিশ্ব মানবতার জন্য অবশ্যই উদ্বেগঃ

ভেনেজুয়েলার ২৯ জন বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পীর মিনতি,

প্রকাশের তারিখ ১৪ই জুলাই, ১৯৭১

 

জুলাই ১৪, ১৯৭১ তারিখে দৈনিক লা রেলিজিয়ন এ প্রকাশিত ২৯ জন বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পীর সনির্বন্ধ অনুরোধ নিন্মরূপঃ

সময় গড়াচ্ছে আর পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর দুর্ভোগ ক্রমেই ফিরে ফিরে অধিকতর শোচনীয় হয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার ডাক্তার আর নার্স প্রতিনিয়ত মহামারী ঠেকাতে, হাজার হাজার নারী-পুরুষ আর শিশুদের মৃত্যুরোধে যেন নিরলস যুদ্ধ করছে। আবাসন, খাদ্য, পরিবহন প্রভৃতি যাবতীয় সমস্যা ঘন্টায় ঘন্টায় তীব্রতর হচ্ছে যা গুটিকয়েক সরকারী এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়, সম্ভব নয় প্রথাগত একাত্মতা জানিয়েও। সকলের শ্রদ্ধেয় এবং প্রশংসিত, যীশুর মত অহিংস মানুষ গান্ধীজীর মাটিতে এই বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে তাঁর দীক্ষা ও বাণীই যেন বিগত সময়ের তুলনায় সর্বাপেক্ষা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ভগ্নিপ্রতিম আর্জেন্টাইন রিপাবলিকের মত ভেনেজুয়েলাতেও আমাদের কার্ডিনাল বিশপ জোসে হামবিয়েতো কুইন্তেরো এবং ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো, জর্জ লিসিস বগ্রগেস,এডুরাডো মাই লিয়া আর্নেস্টো সাবাতো, ফ্রিডা স্কুটজ ডি মন্টভানি হেক্টর বাসালডুয়া, এডলফো ডি অবিয়েতা প্রমুখের নেতৃত্বে বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পীবৃন্দ ইতোমধ্যে সোচ্চার কন্ঠ হয়েছেন এটি জোর দেওয়ার জন্য যে মানবতার বিপর্যয়ের কোনো সীমানা নেই এবং এই ভোগান্তি, মৃত্যু আর নিরাপত্তাহীনতা তা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন তা উদ্বেগের বিষয়।

কিন্তু পূর্ব বাংলার এই হৃদয় বিদারক পরিস্থিতিতে সার্বজনীনভাবে এবং মহৎ মানসে বিশ্ব মানবতা এখনো জাগ্রত হচ্ছে না সেটা মেনে নেওয়া যায় না। এমন সংকটময় মুহুর্তে যে বিশাল পরিমাণে মানবিক সহায়তা অতীব জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজন তা ভারতকে এখনো দেয়া হয়নি। সবসময় মনে রাখতে হবে যে এখানে আমরা ভারতের নির্দিষ্ট কোন সমস্যা নিয়ে কথা বলছিনা বরং আন্তর্জাতিক চরিত্রের একটি মানবিক সমস্যার মোকাবেলা করছি এবং এ সমস্যা আধ্যাত্মিকতাবাদী এবং বস্তুবাদী ক্ষেত্রের ভেদাভেদ নয় বরং সমগ্র মানবজাতির। কোন ভাববিলাসী ঘোষণা বা অতিশয়োক্ত সূত্র নয় পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য আমাদের গণতান্ত্রিক একতা এবং সাধারণ দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে নির্ভীকভাবে অবিরত সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য শক্তিশালী এবং স্পষ্ট আন্তর্জাতিক চেতনা জাগ্রত করতে হবে।

আমরা নিশ্চিত যে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের আবেগ এবং দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত মতামত বিবেচনায় এবং সৌহার্দ্য, ন্যায় এবং শান্তির বলিভারিয়ান আন্তর্জাতিক নীতির প্রতি সৎ থেকে প্রজাতন্ত্রের সরকার শুধুমাত্র বস্তুগত সহায়তা দানেই সীমাবদ্ধ থাকবেনা বরং তার প্রতিনিধিগণের মাধ্যমে জাতিসংঘের কাছ থেকেও আদায় করার চেষ্টা করবে যা শুধুমাত্র মানবিক মূল্যবোধের নিদর্শনস্বরূপ হবে না। এটি হতে হবে দৃঢ় ও সহযোগীতামূলক ঐক্যের মাধ্যমে নিয়মিত অর্থনৈতিক এবং সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ যার আকার হবে সত্যিই বিশাল, এবং যা হবে নিরন্তর এবং ক্রমবর্ধিষ্ণু। বিংশ শতাব্দীর এই ভারতের সংগ্রামে, যে সংগ্রাম যুদ্ধসংক্রান্ত নয়, জাতিসংঘ সেখানে তার চরম দায়িত্বপালন থেকে বিরত থাকতে পারে না। কোনো অহংবোধ বা লালসা থেকে নয় বরং সহৃদয়তার সাথে এই ঐতিহাসিকভাবে ভাগ্যবঞ্চিত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের রোগ, মৃত্যু থেকে উদ্ধারের জন্য বিশ্ববাসীকে তাগাদা দিতে হবে।

সত্যিকার এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য ভারত আন্তর্জাতিক দায়িত্ববোধের গভীর সচেতনতার দাবীদার। এই সেই ভারত যা অসংখ্য মানবতাবাদের নেতৃত্বপূর্ণ, তীব্র সংকটের মাঝেও সোচ্চার পবিত্র কন্ঠ এবং অনেক ন্যায্যতার ধারণা যার শক্তি এবং যা লক্ষ লক্ষ খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়হীন অকালবৃদ্ধ মৃতপ্রায় পূর্ব পাকিস্তানী যারা কাঁদার সময় স্বান্তনাও পায় না তাদের প্রতি সমস্ত হৃদয় বিলিয়ে, অসম্ভব মমতা আর শ্রদ্ধার সাথে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।