3

বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের গণহত্যায় সাহায্য না করার আবেদন

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের অস্থায়ী  রাষ্ট্রপতি কতৃক যুক্ত্রাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের গণহত্যায় সাহায্য না করার আবেদন দি হিন্দুস্তান টাইম ২৪ জুন

১৯৭১

 

 

গণহত্যায় অবদান রাখবেন না
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলামের আবেদম
জুন ২৩; ১৯৭১
আজ বাংলাদেশ সরকার এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহের প্রতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন।
রাষ্ট্রপতি নিক্সনকে পাঠানো একটি টেলিগ্রামে জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণ এ অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি জানতে পেরে প্রচন্ড ব্যথিত এবং ক্ষুদ্ধ।

তিনি চিহ্নিত করে দেখান পাকিস্তান তাদের অস্ত্রাগারের সকল অস্ত্র এমনকি ত্রাণ সরবরাহের জন্য যে জলযান দেয়া হয়েছে, সবকিছুই গণহত্যার জন্য ব্যবহার করছে এবং বলেন “এখন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিবেক এবং তাদের জাতীয় স্বার্থের প্রতি আবেদন করি, তারা যেন গণহত্যা , উচ্ছেদ এবং এই দরিদ্র রাষ্ট্রের দুর্লভ সম্পদের প্রতি ধ্বংসযজ্ঞে অবদান না রাখে।”

বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র এই নতুন অস্ত্রচুক্তিকে “বাংলাদেশের রক্তাক্ত জনগণের প্রতি কঠিন আঘাত” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে, পাকিস্তানকে যা ই সাহায্য দেয়া হোক না কেন স্বাধীনতা সংগ্রাম নিরলসভাবে চলবে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর বিভিন্ন মালামাল এবং অতিরিক্ত যন্ত্রপাতিও ইতিমধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানে সরবরাহ করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
পররাষ্ট্র কার্যালয়ের মুখপাত্র বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এমন কাজের ফলে মুক্ত বিশ্ব তথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের জনমগনের মোহমুক্তি ঘটবে। তিনি আরও বলেন, “একটি ভিনদেশী সামরিক জান্তা কর্তৃক নৃশংসতা ও রক্তগঙ্গার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের উত্তাল কণ্ঠস্বরের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এসব কাজ স্পষ্টত অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।”

১৯৫১ সাল থেকে পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্যের পটভূমি বর্ণনা করতে যেয়ে তিনি আরও মনে করিয়ে দেন যে, পাকিস্তান ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩,০০০ মিলিয়ন ডলার অর্থসাহায্য পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। শুধুমাত্র ১৯৬৪ থেক ১৯৬৫ সময়কালেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্যের পরিমাণ প্রায় ১,৫০০ থেকে ২,০০০ মিলিয়ন ডলারের মত। তিনি বলেন যে, এই বিশাল সামরিক সাহায্যের পুরোটাই বাঙালীর সগ্রামের করার জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে।

মুখপাত্র আরও বলেন, এমন তথ্য পাওয়া গিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে নিম্নবর্ণিত অস্ত্র সরবরাহের সম্মতি জানিয়েছেঃ প্রায় ৩০০ সশস্ত্র সৈনিক ক্যারিয়ার, চারটি মেরিটাইম এয়ারক্রাফট, ছয়তি এফ-১০৪ জঙ্গী বিমান এবং সাতটি বি-৫৭ বোমারু বিমান।

 

তিনি বলেন “বর্তমান এই অস্ত্র সরবরাহ এটাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্ষয়প্রাপ্র পাকিস্তানের অস্ত্রাগার পরিপূর্ণ করতে চায়।”
তিনহি আরও যোগ করেন যে, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের নিকট আবেদন করছে জাহাজ ফিরিয়ে নিয়ে জন্য, পাকিস্তানে সকল যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করতে এবং অবিলম্বে পাকিস্তানে পরবর্তী সকল অস্ত্র এবং মালামাল সরবরাহ বন্ধ করার জন্য।

(দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, নয়াদিল্লী- জুন ২৪, ১৯৭১)