13

১২০ জন শ্রমিক দলীয় এম,পি কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের দাবী

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
১২০ জন লেবার দলীয় এম.পি.-এর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানানোর দাবি

 

দি স্টেটসম্যান ১৭ জুন, ১৯৭১

 

 

১২০ জন লেবার দলীয় এম.পি.-এর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের আবেদন

এস. নিহাল সিং

 

লন্ডন, জুন ১৬ একশ বিশ জন লেবার দলীয় এম.পি. গতরাতে হাউস অভ কমন্স-এ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বীকৃতি দানের দাবি জানিয়েছেন। দাবি উত্থাপনকারীদের মধ্যে ছিলেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মি. ইয়ান মিকার্ডো, এবং প্রধান দাবি উত্থাপনকারী ছিলেন মি. জন স্টোনহাউস, যিনি গত এপ্রিলে পশ্চিম বঙ্গ সফর করে এসেছেন। গত সপ্তাহে হাউস অভ কমনস-এ এ সংক্রান্ত বিতর্কের পরই এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হলো, তবে এ ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে সরাসরি বাংলাদেশের স্বীকৃতি দাবি করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, ব্যাপক হারে বেসামরিক নাগরিক হত্যা এবং উচ্চ মাত্রার নৃশংসতা চালানোর মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব বাংলা শাসন করার সকল অধিকার হারিয়েছে। প্রস্তাবে পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক শান্তির প্রতি হুমকি এবং জেনোসাইড কনভেনশনের লঙ্ঘন- উভয় বিবেচনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সভা আহ্বান করা হয়। এতে আরও বলা হয়, পরিস্থিতি জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত পূর্ব বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার নিদর্শন স্বরূপ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত।

দু’টি বিষয় এই সুস্পষ্ট অবস্থানের জন্য দায়ী। সম্ভবত লেবার দলের মধ্যে মি. হ্যারল্ড উইলসন এর দাবিকৃত পাকিস্তান বিষয়ক বিতর্কের সময় শূন্য বিরোধী বেঞ্চ একটা অপরাধবোধের জন্ম দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, এটা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে সমস্যা সমাধানে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ, শরণার্থী সহায়তার প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল হওয়া সত্ত্বেও, ইয়াহিয়া সরকার পূর্ব বাংলার পরিস্থিতি ধামাচাপা দেয়ার পর পাকিস্তানের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্রতিই অধিক মনোযোগী।

বাংলাদেশ বিষয়ে এই জোরালো পদক্ষেপ নেবার বিষয়ে লেবার দলের সিদ্ধান্ত তাদের জাতীয় নির্বাহী দ্বারা এ সংক্রান্ত দু’টি প্রস্তাব পাশের মাধ্যমেও স্পষ্ট। প্রধান প্রস্তাবটিতে ব্রিটিশ সরকারকে নিরাপত্তা পরিষদে এ সংক্রান্ত প্রশ্ন উত্থাপন, উ থান্টের ত্রাণ তহবিলে ব্রিটেনের অংশগ্রহণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি এবং শরণার্থীদের স্বার্থে ভারতকে উদার সহায়তা দেবার আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গুলো অকার্যকর হয়ে পড়ায় সেখানে সাহায্য পাঠানো অর্থপূর্ণ হতে পারে না। সুতরাং, দুর্ভোগ কমাতে সাহায্য করার জন্য সরকারের উচিত পাকিস্তানকে সাহায্য সীমিত করা এবং এই মর্মে এইড পাকিস্তান কনসোর্টিয়ামের সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। দ্বিতীয় প্রস্তাবে অবিলম্বে একটি দুর্যোগ সহায়তা কমিশন গঠনের আহবান জানানো হয়েছে।

ব্রিটিশ লেবার পার্টিতে বাংলাদেশের জনগণ অতি দ্রুত মিত্র অর্জন করে নিলেও, ব্রিটিশ সরকার কতখানি সাড়া দেবে সে বিষয়ে সন্দেহ আছে, এবং ব্রিটেনের সবাই মূলতঃ মুক্ত বাজার নিয়ে অধিক আগ্রহী।

পিটিআই adds: সুইডেন, হল্যান্ড, ইটালি, অস্ট্রিয়া এবং হাঙ্গেরি সহ ইয়োরোপীয় রাষ্ট্রসমূহ এ বিষয়ে একমত হয়েছে যে পাকিস্তান পূর্ব বাংলার উপর কোনো ‘একতরফা’ সমাধান চাপিয়ে দিতে পারে না এবং তারা অন্যান্য বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্রসমূহ সহ এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এর উপর চাপ প্রয়োগ করবেন। প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধীর ব্যক্তিগত দূত হিসেবে সফরকালে শিল্প উন্নয়ন মন্ত্রী মি. মইনুল হক চৌধুরী এর কাছে এই রাষ্ট্রসমূহ এই মনোভাব ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনার জন্য সফরে যাওয়া চার ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মধ্যে তিনিই প্রথম সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন।