13

পূর্ববাংলা ট্র্যাজেডির প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক দলীয় এম,পি মিঃ মাইকেল বার্নস এবং ‘ওয়ার অন ওয়ান্ট’ সভাপতি ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ-এর বিবৃতি

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব বাংলা ট্রাজেডির প্রত্যক্ষদর্শী বৃটেনের শ্রমিক দলের এম.পি মিঃ মাইকেল বার্নস এবং ‘ওয়ান অন ওয়ান্ট’ সভাপতি ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ-এর বিবৃতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ২ জুন,১৯৭১

 

পূর্ব বাংলা ট্রাজেডির প্রত্যক্ষদর্শী বৃটেনের শ্রমিক দলের এম.পি মিঃ মাইকেল বার্নস এবং ‘ওয়ান অন ওয়ান্ট’ সভাপতি ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ-এর বিবৃতি

কলকাতা,জুন ১:  মিঃ মাইকেল বার্নস,বৃটিশ লেবার এমপি, যিনি বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে ভুক্তভোগীদের গতকাল দেখেতে এসেছেন, তিনি বলেছেন-“বিশ্বকে অবশ্যই এই দুঃখজনক ঘটনাটির সমাধান করার জন্য একটি সমাধান খুঁজতে হবে।”

তিনি পূর্ব বাংলায় যা ঘটছে সেটাকে শুধুমাত্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলাকে অর্থহীন(বোকামি) বলেছেন। তিনি এবং তাঁর সরকার এই ব্যাপারটিকে জাতিসংঘরের সামনে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

মিঃ বার্নস এবং ‘ওয়ান অন ওয়ান্ট’ সভাপতি ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ,বৃটেনের একটি দাতব্য সংস্থা, যারা সীমান্তের  কিছু সংখ্যক ক্যাম্প পরিদর্শন করেছে, তাঁরা বলেছে বিশ্ববাসীকে অবশ্যই যতদ্রুত সম্ভব সাধ্যমতো সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

তাঁরা প্রস্তাব দিয়েছে যে, যুক্তরাজ্যের উচিৎ অবিলম্বে তাঁদের সাহায্যের পরিমান এক মিলিয়ন থেকে দশ মিলিয়নে উন্নীত করা। মিঃ চেসওয়ার্থের মতে, সে অর্থের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পূর্ব বাংলার সাইক্লোন আক্রান্ত এলাকার জন্য দেয়া হবে।

মিঃ চেসওয়ার্থ বলেছেন, বৃটিশ পররাষ্ট্র (বৈদেশিক) মন্ত্রীর ব্যক্তিগতভাবে এখানে পরিদর্শন করা উচিৎ  কারণ এখানে সমস্যার মাত্রা এতোই বৃহৎ যে, লন্ডন, ওয়াশিংটন এবং মস্কোর পক্ষে এটা পরিমাপ করা কঠিন হবে। তিনি আরও বলেছে, “এখানে যা ঘটছে সেটা বিশ্ব শান্তির জন্য একটি সম্ভাব্য হুমকি নয়?”

সেনাবাহিনীর কার্যকলাপে বাংলাদেশের মানুষেরা পালিয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের কার্যকলাপ চরম দুর্দশা এবং ভোগান্তি নিয়ে আসছে।

মিঃ বার্নস বলেছেন, কিছু মানুষ তাঁকে বলেছে, সেনাবাহিনী পূর্ব বাংলার জনগণকে তাঁদের “রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি” পরিবর্তন করতে জোর করছে যেমনটা চাইনিজরা তিব্বতিদের ক্ষেত্রে করেছিলো।

মিঃ বার্নসের মতে, বিশ্বের সকল দেশ যারা পাকিস্তানকে অস্ত্র এবং উন্নয়ন সাহায্য দিয়েছিলো সেসবই এখন পূর্ব বাংলার বর্তমান বিয়োগান্তক ঘটনার সাথে জড়িত কারণ পাকিস্তান তার নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধেই অস্ত্রের ক্ষমতা প্রদর্শন করছে।

মিঃ বার্নস ভাবছে, দাতা দেশগুলোর এখন জাতিসংঘের মাধ্যমে কিছু  শর্ত দিয়ে অস্ত্র নেয়া অথবা উন্নয়ন কাজগুলো করতে হবে যাতে পাকিস্তান সরকারের মত সরকারেরা বুঝতে পারে যে, যদি তারা নিজ দেশের মানুষের সাথে  তাঁদের (দাতা দেশগুলোর) দেয়া সাহায্য ব্যবহার করে সামরিক অভিযানে জড়িয়ে পরে তাহলে তাদের প্রতি দাতা দেশগুলোর মনোভাব কি হবে।

মিঃ বার্নস বলেছেন,যদি পূর্ব বাংলার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান পাওয়া যায় তাহলে বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবশ্যই পাকিস্তান সরকারকে অর্থনৈতিক চাপ দিতে হবে পূর্ব বাংলা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার এবং  জনগণের সাথে একটি আন্তরিক সমঝোতায় আসার জন্য।

এই প্রসঙ্গে মিঃ চেসওয়ার্থ এবং মিঃ বার্নস উভয়ই বলেছেন, এরকম কোন নজির নেই যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রয়োজনে অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগে বৃটেন সাথে ছিল না।

মিঃ বার্নস বলেছেন যদি বৃটেন ও আমেরিকা এবং পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পথ অনুসরণ করে এবং এই প্রশ্নে একত্রিত থাকে, তাহলে পূর্ব বাংলার জন্য একটি দীর্ঘ মেয়াদি আন্তরিক ও গণতান্ত্রিক  সমাধান পাওয়া যাবে। তিনি আবারো বলেছেন, সে বৃটিশ সরকারকে এই ব্যপারে ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাপ দিবেন।

যখন তাঁর মিঃ হিথের প্রতি তাঁর না-বোধক মনোযোগ ছিল, তখন তিনি মিসেস. ইন্দিরা গান্ধীর আহ্বানে পাকিস্তানে সাহায্য স্থগিত করেছিল। মিঃ বার্নাস বলেছেন, বৃটেন পাকিস্তানে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সহযোগিতা স্থগিত করবে না। কিন্তু তারা কোন নতুন সহযোগিতার অঙ্গীকার করবে না যদি পাকিস্তান পূর্ব বাংলার সাথে একটি সমঝোতার বন্দোবস্ত করবে।

মিঃ চেসওয়ার্থ আরো ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, এই মুহূর্তে বৃটেন থেকে পাকিস্তানে কোন সহযোগিতা যাবে না। এটা এমন একটা সময় ছিল  যখন সাহায্যের কার্যক্রম ব্যহত  হচ্ছিলো এবং কিছু প্রযুক্তিগত সহায়তা, যেমনঃ ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য,  চলমান ছিল।

মিঃ বার্নস এবং মিঃ চেসওয়ার্থ উভয়ই ব্যাখ্য করতে ব্যাথিত হচ্ছিলেন যে, আগামী বছরের জন্য কি সাহচর্য সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যখন সাহচর্য দেশগুলো কিছুদিন পূর্বে ফিরে যাবে, তারা ব্যয় পরিকল্পনা জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করবে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে এবং বৃটেন দাবি করেছে পূর্ব বাংলায় ঔপনিবেশিক শাসনের কোন অনুমেয় কারণ ছিল না।

মিঃ চেসওয়ার্থ বলেছেন, পূর্ব বাংলার বিয়োগান্তক প্রতি বৃটেনের প্রতিক্রিয়া ছিল এক প্রচণ্ড ধাক্কার মতো। যুক্তরাজ্যের মানুষের কাছে এটা বোঝা কষ্টকর ছিল যে এরকম নৃশংসতা সত্যিই ঘটতে পারে!

তিনি তাঁর সংগঠনকে বলেছিল,জনগণের সত্যিকারের প্রতিনিধি হিসেবে এবং ত্রান বিতরণ নিয়ে যুদ্ধকে স্বীকার করে নিতে বাংলাদেশ সরকারের কোন দ্বিধা ছিল না। একই সময়ে, তিনি আরো যোগ করেন যে, পাকিস্তানের সামরিক শাসনের জন্য একচেটিয়াভাবে সকল সরবরাহ বিতরণ করা ভুল হবে।

সবশেষে, মিঃ চেসওয়ার্থ পূর্ব বাংলায় একটা “গুরুতর” দুর্ভিক্ষের আশংকা করছিলেন কারণ দেশের বৃহত্তর একটা অংশে বীজ বপন করা হয় নি।